মাদারীপুর থেকে বিলীন হয়েছে ৩৭ হাজার খেজুরগাছ। এমন তথ্যই দিয়েছে মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। খেজুরগাছ বিলীন হওয়ার পেছনে জ্বালানির জন্য নির্বিচারে গাছ কাটা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, পরিবেশ দূষণ, আবাদি জমিতে বসতভিটা ও ইট ভাটার কারণকেই দায়ী করছেন পরিবেশবাদীরা। ফলে আগের মতো আর গাছি বা শিয়ালদের রস সংগ্রহ করতে দেখা যায় না। তারাও পেশা পাল্টে নিচ্ছেন।
মাদারীপুর সদরের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে পুরো শীত মৌসুমে থাকত খেজুরগাছের কদর। কিন্তু এখন শীত মৌসুমেও দেখা মিলছে না গাছিদের।
সদর উপজেলার চরগোন্দ্রিপুর গ্রামের ৩০ বছর ধরে খেজুরগাছ কাটা বাবুল শিকদারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের অনেক খেজুরগাছ ছিল কিন্তু এখন আছে মাত্র ১০টা। অনেক গাছ মরে গেছে। এখন মাত্র তিনটি গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ করি। আর অন্যের কিছু গাছ কেটে কোনো রকম চলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আমাদের সন্তানেরা হয়তো এই পেশায় থাকবে না।’
সদর উপজেলার কুনিয়ার গাছি জাহাঙ্গীর শরীফ বলেন, ‘৪০ বছর ধরে খেজুরের গাছ থকে রস সংগ্রহের কাজ করছি, আগে প্রচুর পরিমাণে রস সংগ্রহ করতাম। পুরো শীতের মৌসুম কাটতো খেজুরগাছ নিয়ে। এখন মাত্র ২০-৩০টি গাছ নিয়েই আছি। খেজুর রস ও গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও গাছ না থাকায় সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। ইটভাটা মালিকেরা খেজুরগাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক সময় গাছ মরেও যাচ্ছে।’
মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘১০ বছর আগে মাদারীপুর জেলায় ৭৫ হেক্টর জমিতে ৮৪ হাজার ৯৮৫টি খেজুরগাছ ছিল। বর্তমানে ৪৫ হেক্টর জমিতে ৪৭ হাজার ৭৩১টি খেজুর গাছ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘খেজুরগাছ না কাটার জন্য আমরা জনগণকে সচেতন করছি। মাঠ পর্যায়ে আমাদের অভিযানও চলে। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ। কেউ যদি আইন অমান্য করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।’