সময় তখন বেলা ১১টা। দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি কক্ষে পাঠদান করছে চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক ব্যস্ত মাঠে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে ছোটাছুটি করা অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কক্ষের ভেতর ঢোকাতে। গত বৃহস্পতিবার এমন চিত্রই দেখা গেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাতিবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের হাতিবান্ধা গ্রামের এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন ২৫০। শিক্ষক রয়েছেন পাঁচজন। স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষকেরা নিয়মিত আসেন না, শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পাঠদান করেন না। ফলে এখানকার শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে রয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো বাংলা পড়তে পারে না। তারপরও অন্য বিদ্যালয়গুলো দূরে হওয়ায় অভিভাবকেরা বাধ্য হয়ে এখানে শিশুদের পাঠাচ্ছেন।
ক্লাসে পাঠদান করা চতুর্থ শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী বলে, ‘আজ সউগ স্যার সমস্যাত। খালি হেড স্যার আলছে। ওই জন্যে হেড স্যার ক্লাস নিবার কইছে। আমি লেখা দিয়া খাতা দেখুছি।’
মাঠে খেলা করা এক শিক্ষার্থী বলে, ‘স্যারেরা প্রায় ইসকুল আইসে না। কোনো দিন ছুটির আগ পর্যন্ত ক্লাস হয় না। রুমে বসি থাকির মনায় না জন্যে মাঠোত খেলা করুছি।’
বিদ্যালয়ের বাকি শিক্ষকেরা কোথায় জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সহিদা বেগম বলেন, ‘সবারই সমস্যা। তাই আজ একাকেই সব সামলাতে হচ্ছে।’
প্রধান শিক্ষক জানান, চারজন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে পারভিন নাহার বৃহস্পতিবার উপজেলায় প্রশিক্ষণে ছিলেন, নাঈমা ইসলাম দেড় মাস ধরে ছুটিতে, মাহামুদুন্নবী জানিয়েছেন তিনি জ্বরে ভুগছেন আর হুসাইন আহমেদের শাশুড়ি অসুস্থ থাকায় তিনি আসেননি।
বিদ্যালয় মাঠে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইউসুফ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষকদের প্রতিদিন সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে আসতে বলেছি।
আজ দেখছি প্রধান শিক্ষক ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য কোনো শিক্ষক আসেননি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলব এবং শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানাব।’
যোগাযোগ করা হলে তারাগঞ্জের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র একজনের বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়া খুবই শঙ্কার বিষয়।
প্রধান শিক্ষক ছাড়া কী কারণে অন্য শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে আসেননি তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।