স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী চন্দন রায়ের মেসে আগে সপ্তাহে দুদিন মাছ-মাংস রান্না হতো। খাবারে মাছের তালিকায় ছিল রুই, মৃগেল। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। মাসে দুবারও মাছ রান্না হয় না। কম দামে পাঙাশ, ছোট আকারের তেলাপিয়া পাওয়া গেলেই মাছ খাওয়া হয় তাঁদের। মাংস রান্না হয়, তবে মাসে একবার।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী চন্দন রায়ের সঙ্গে গতকাল বুধবার মডার্ন মোড় বাজারে কথা হয়। তিনি আলু, পেঁপে ও শিম কিনছিলেন। চন্দন বলেন, ‘পালাক্রমে মাসে এক দিন মেসের বাজার করতে হয়। বাজারে এলে মাথা ঘোরে—কী কিনব। শাকসবজি কিনতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। ইচ্ছে থাকলেও মাছ-মাংস কেনা হয় না এখন। অথচ আগে সপ্তাহে দুদিন এক বেলা মাছ-মাংস থাকত।’
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। এ ছাড়া কারমাইকেল কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজসহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন। তাঁদের ৮০ শতাংশই থাকেন মেসে। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মেসের জীবনযাপন। খরচ বাড়লেও খাবারের মান বাড়ছে না। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জোগান দিতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ এবং মেসের শিক্ষার্থীরা। তারা ঠিকমতো আমিষ-প্রোটিন খেতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের লাগাম কমিয়ে আনা খুব দরকার। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য টিকিয়ে রাখতে হলে ভালো মানের খাবার দরকার। তা না হলে শিক্ষার্থীরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।
রংপুর সরকারি কলেজের স্নাতকোত্তরে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মাহাফুজ ইসলাম জানান, তিনি যখন মেসে ওঠেন, তখন প্রতিবেলা খাবারে খরচ হতো ২৫ টাকা। ওই টাকায় দুই বেলা আমিষ থাকত। এখন খরচ বেড়ে ৬০ টাকায় দাঁড়ালেও এক বেলা আমিষ পান না। তিন বেলার খাবারে যে শাকসবজি দেওয়া হয়, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অল্প। পণ্যদ্রব্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে অনেক কষ্টে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী জিম আক্তার জানান, তাঁর মেসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ জন। প্রতিদিন গড়ে সেখানে থাকেন ২০ জন। প্রতি বেলা খাবারের খরচ বাবদ দেন ৬০ টাকা। এতে গড়ে এক দিনে টাকা ওঠে ১ হাজার ২০০ টাকা। এই টাকায় ১০ কেজি চাল কিনতে হয়। প্রতি কেজি চাল ৫৬ টাকা দরে ৫৬০ টাকা, তেল আধা লিটার ৮৮ টাকা, প্রতি কেজি সবজি ৪০ টাকা ওপরে।
জিম বলেন, ‘১ কেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকা, ব্রয়লার ২৮০ টাকা, মাছের দামও বেশি। ১ কেজি মাছ-মাংস কিনতে গেলে পরের বেলা সবজি খাওয়ার মতো উপায়ও থাকে না। তাই শাকসবজি খেয়েই থাকতে হচ্ছে।’
গতকাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শসা ৩৫, ঢ্যাঁড়স ৪০, শিম ১২০ টাকা। ফুলকপি ৮০, আলু ৩৫, ঝিঙে ৫০, ধনেপাতা ১০০, মুলা ৩৫ টাকা। বেগুন ৩৫, পটোল ৪০, টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০, পেঁয়াজ ৪০, রসুন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের চিংড়ি ৬০০, সুরমা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। এ ছাড়া পোয়া মাছ ৪৫০, শিং ৬০০, রুই ২৫০ থেকে ২৮০ ও পুঁটি ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।