টাঙ্গাইলের সখীপুরে মাঠের রোপা আমন ফসল কাটা শুরু হয়েছে। এতে উৎসব বিরাজ করছে কৃষক পরিবারে। ধানের বাজারমূল্যেও খুশি কৃষক। উপজেলার মৌশা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিউর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ব্লকের কৃষকেরা পুরোদমে ধান কাটা শুরু করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যেই সিংহভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে।’
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাকা ধান ঘরে তুলতে কিষান-কিষানিরা ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করছেন। প্রায় সব এলাকার কৃষকই ধান কাটার কাজে ব্যস্ত। এ মৌসুমে কিছু জমিতে ছত্রাক (ব্লাস্ট) মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা গেলেও বেশি একটা ক্ষতি হয়নি। সময়মতো সার-বিষ প্রয়োগ করায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান কৃষকেরা। কোথাও নিজেদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে, আবার অনেকেই শ্রমিক নিয়ে ধান কেটে বাড়িতে তুলছেন। এত পরিশ্রমের পরেও আনন্দ-উৎসাহের কমতি নেই তাঁদের।
কৃষি কার্যালয়ের সূত্রমতে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ২৫টি ব্লকে প্রায় ১৫ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ১৯০ টন। গত বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২২ হাজার টন। রোগবালাই ও পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষায় মাঠে মাঠে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
শোলা প্রতিমা গ্রামের কৃষক আবু হানিফ মিয়া বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ধান চাষে কৃষকেরা বেশি পরিশ্রম করেছেন। মৌসুমের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি ছিল না, অনেকেই বৈদ্যুতিক মোটরের পানি দিয়ে আমন ধান চাষ করেন। এ ছাড়া হঠাৎ ডিজেল ও সারের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচও বেশি পড়েছে। তাই সরকারনির্ধারিত মূল্যে কৃষক ধান দেবেন না। স্থানীয় বাজারে যে মূল্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে কোনোরকম চলবে, কিন্তু বাজারমূল্য এর চেয়ে কমে গেলে কৃষকেরা নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
ধান কাটার শ্রমিক শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে সখীপুরে আইছি। এক গেরস্থের বাড়িতে কাজ করতাছি। এহানে কামলার দাম প্রতি দিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। তবে পুরোপুরি ধান কাটা শুরু অইলে মজুরি আরও বাড়ব।’
প্রতিমা বংকী গ্রামের কৃষক আবদুল বাছেদ বলেন, ‘স্থানীয় হাটে শুকানো ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। ভরা মৌসুমেও কৃষকেরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় বেশ খুশি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি। তাই বেশ কিছু জমি অনাবাদি ছিল। তবে ওই সব জমিতে কৃষকদের আগাম জাতের সরিষা চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।