চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ক্ষতিকর রং মেশানো মাছ বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাজারে মাছ কিনতে আসা ক্রেতারা জানান, সামুদ্রিক চেউয়া, পোপা, লইট্যা ও চিংড়ি মাছে কাপড়ের ক্ষতিকর রং মেশাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, মাছে ক্ষতিকর রং মেশানোর ফলে পচা মাছ দীর্ঘক্ষণ দেখতে তাজা মনে হয়। দেখতে লোভনীয় চকচকে মনে হওয়ার কারণে ক্রেতারা এসব মাছ কিনে ঠকছেন। এতে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাছ বিক্রেতা বলেন, ‘সমুদ্রে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে বাজারে লইট্যা ও পোপা, চিউয়া মাছের সংকট হয়। পচে গেলে এই মাছ সাদা হয়ে যায়। এ কারণে এসব পচা মাছে লাল রং মেশানো হয়। রং মেশানোর ফলে পচা মাছ লাল তাজা দেখায়। অনেকে মাছ তাজা রাখতে ফরমালিনও মেশান।’
বাজারে মাছ কিনতে আসা কামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘মিঠাছড়া বাজার থেকে এত দিন মাছ কিনে খেয়েছি। কিন্তু যা দেখলাম, এখন ভাবছি টাকা দিয়ে কিনে কী খাচ্ছি আমরা।’
মাছ বিক্রেতা মাসুদ বলেন, ‘আর কখনো মাছে ক্ষতিকর কাপড়ের রং মেশাব না। পরবর্তীকালে যেকোনো শাস্তি আমি মেনে নেব।’
স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, ‘বাজারে পচা মাছে রং মেশানোর এই দৃশ্য প্রতিদিনের। কোনো কোনো সময় মাছের আড়ত থেকে রং ও ফরমালিন মেশানোর পর খুচরা বাজারে বিক্রি হয়।’
মাছ ব্যবসায়ী মো. ইউনুছ বলেন, ‘পচা মাছ তাজা দেখানোর জন্য আমরা রং লাগাই। অনেক সময় তাজা মাছেও লাল রং লাগাতে হয়। কারণ রং দিলে মাছ সুন্দর দেখায়। ভালো দামে বিক্রি করা যায়।’
এ প্রসঙ্গে মিরসরাই সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, ‘জেলেদের বিভিন্ন পরামর্শ সভায় মাছে ক্ষতিকর রং না মেশানোর জন্য নিষেধ করা হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ছোট মাছে রং মিশিয়ে বিক্রি করছেন। ক্ষতিকর রং মেশানো মাছ বাজারে বিক্রি হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখব।’
চিকিৎসক এ এস এম রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রাকৃতিক রং ছাড়া বাকি সব রং স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। খাবারের রং সম্পূর্ণ বিষাক্ত রাসায়নিক একটা পদার্থ। ফলে যখন এই রাসায়নিক পদার্থ আমাদের দেহে প্রবেশ করে। তখন তা আমাদের দেহে সুস্থ কোষগুলো ধ্বংস করে দিয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করে। এ ছাড়া গর্ভবতী মা যদি এসব রং দেওয়া খাবার খান, তাহলে তার গর্ভের সন্তান প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মলাভ করা স্বাভাবিক। এ ছাড়া দীর্ঘদিন রং দেওয়া খাবার গ্রহণের ফলে কিডনি, লিভারে বিভিন্ন সমস্যা দেখা হয়। এমনকি কিডনি অকেজো হয়ে যেতে পারে। খাবারে রং ব্যবহারের ফলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই পুষ্টিহীন, মারাত্মক শারীরিক সমস্যা সৃষ্টিকারী রং মেশানো থেকে দূরে থাকতে হবে।’