জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
‘পোলাপাইনরে কেমনে ভাত খাওয়াইমু ওই চিন্তাত আছি। আর ঈদের কাপড় তো ওখন আমার লাগি দুঃস্বপ্ন বাবা’—ঢলের পানিতে সব ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর এভাবেই দুঃখের কথা বলছিলেন কেজাউড়া গ্রামের আয়ন নেছা। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরে যেসব কৃষক পরিবারের শতভাগ ফসল তলিয়ে গেছে এই নারী তাঁদেরই একজন।
আয়ন নেছার পরিবারের সদস্যসংখ্যা ১০ জন। পাঁচ ছেলে, তিন মেয়ে আর বৃদ্ধ স্বামী নিয়েই তাঁর পরিবার। পরিবারের আয়ের উৎস হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধান। এই ধান চাষ করেই সারা বছর চলে তাঁদের। বিকল্প কোনো আয় নেই, নেই কোনো সহায়সম্পদ। সেই ফসল হারিয়ে এখন নিঃস্ব তাঁরা।
আয়ন নেছার মতোই ঈদের আনন্দ মলিন সুনামগঞ্জের হাওর, অধ্যুষিত চার উপজেলা—তাহিরপুর, ধর্মপাশা, দিরাই ও শাল্লার ২৩ হাজার পরিবারের।
দিরাই উপজেলার কেজাউড়া গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলীর (৭০) পরিবারটা বেশ বড়। সাত সন্তান ও নাতি-নাতনির ভরণপোষণের জন্য হাওরের বোরো ফসলের ওপরই নির্ভরশীল তিনি। এবার বন্যায় সব ফসল হারিয়ে এত বড় সংসার কীভাবে চলবে, সেই চিন্তা ঘুরছে মাথায়। এর মধ্যেই একদিকে ঋণের চাপ, অন্যদিকে নাতি-নাতনিদের ঈদের কাপড় কেনার বায়না—সব মিলিয়ে দিশেহারা প্রায় আইয়ুব আলী।
একই হাওরে চাষাবাদ করেছিলেন উপজেলার বকশিপুর গ্রামের মাসুক মিয়া। তিনি ঈদের কথা ভাবতেই পারছেন না, যদিও বাচ্চাদের কাপড় দেওয়ার বায়না আছে। ফসল হারিয়ে এখন ঋণ পরিশোধ আর সামনে কীভাবে চলবেন, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন এই কৃষক।
সম্প্রতি ভারতের মেঘালয়ে ও চেরাপুঞ্জিতে কদিনের টানা ভারী বর্ষণে পানির ঢল নেমেছে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে। এতে বানের জলে ভেসে গেছে ১৫টি হাওরের ফসল।