অর্ধশত বছর আগে রাঙামাটির কাপ্তাইসহ আশপাশের উপজেলায় সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করেছিল চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতাল। বর্তমানে ওই অঞ্চলের প্রসূতি ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার কেন্দ্র পরিণত হয়েছে এটি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১১৩ বছর আগে ১৯০৭ সালে কাপ্তাইয়ে স্থাপিত হয় চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতাল। এই হাসপাতালে ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডের ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি সোসাইটির (বিএমএস) প্রোগ্রাম অফিসার মিস শু হেডলাম ‘আন্ডার ফাইভ’ প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু করেন। প্রকল্পের আওতায় ‘৫ বছরের নিচে’ শিশুদের পুষ্টি ও টিকাদান এবং প্রসূতি মায়েদের মাঠপর্যায়ে সেবাদান শুরু করেন।
সেই সময় মাত্র ৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে কাপ্তাইয়ের তিন ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সেবা দেওয়া হতো। বর্তমানে ৭১ সেবিকা ও ১৪ সুপারভাইজার-ফ্যাসিলিটেটর নিয়ে ওই অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে।
প্রকল্পের সুপারভাইজার মাসাং মারমা বলেন, ‘দুর্গম অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা সেবিকাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা, উপকরণ সরবরাহসহ প্রতিনিয়ত নানা পরামর্শ প্রদান করে আসছি।’
প্রকল্পের সেবাগ্রহীতা কাপ্তাইয়ের দুর্গম রাইখালীর মাইনু মারমা, মনুচিং মারমা, বারুদগোলার কালাচান চাকমা জানান, চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের কমিউনিটি হেলথ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তাঁরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন। প্রকল্পের বিভিন্ন অবহিতকরণ সভায় অংশ নিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক প্রবীর খিয়াং বলেন, ‘কাপ্তাইয়ে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে কমিউনিটি হেলথ প্রোগ্রামের ভূমিকা প্রশংসনীয়। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বাস্থ্যক্ষেত্র ছাড়াও সামাজিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে করোনাকালে অনেক পেশাজীবী যখন আতঙ্কে ঘরে বসে ছিলেন, তখনও স্বাস্থ্যকর্মীরা ন্যূনতম সুরক্ষা নিয়ে ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন। তা ছাড়া বাল্যবিবাহ, নারী শিক্ষা, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি সচেতনতা বিষয়ে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনতাসির জাহান বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চলে অনেক দুর্গম এলাকার লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা কমিউনিটি ক্লিনিকে এসে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন না। সেই এলাকায় গিয়ে সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের কর্মীরা সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ চৌধুরী জানান, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলে চন্দ্রঘোনা কমিউনিটি হেলথ প্রোগ্রামের স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি তাঁরা আমাদের অনেক কাজে, বিশেষ করে টিকাদান কার্যক্রম এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রমে সহযোগিতা করে আসছেন।’