নিজেদের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিযানে নেমে দারুণ কিছু সুখস্মৃতি নিয়ে ফিরেছে বাংলাদেশ নারী দল। দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার কঠিন পরীক্ষা নিয়েছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিততে জিততে হেরেছে। তবে পাকিস্তানকে ঠিকই পরাস্ত করেছেন মেয়েরা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাওয়া প্রথম জয়ের দিনে ৪৪ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন ওপেনার শারমিন আক্তার সুপ্তা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া (২৪), রানার্সআপ ইংল্যান্ড (২৩) ও সেমিফাইনালিস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার (৩৪) বিপক্ষেও ভালো কিছুর আভাস দিয়েছিলেন। টুর্নামেন্টে ২৪.৫০ গড়ে ১৪৭ রান করেছেন সুপ্তা। তারই পুরস্কার হিসেবে নারীদের আইপিএলে (অফিশিয়াল নাম উইমেন্স টি-২০ চ্যালেঞ্জ) সুযোগ পেয়েছেন ২৬ বছর বয়সী ব্যাটার।
১১ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন সুপ্তা। তবে বিশ্ব ক্রিকেটে আলোচনায় আসতে সময় লেগেছে এক দশক। গত বছর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সুপ্তার ১৩০ রানের হার না মানা ইনিংস হইচই ফেলে দেয়। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে সেটিই কোনো বাংলাদেশি নারীর প্রথম সেঞ্চুরি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ানডে স্বীকৃতি না থাকায় ইনিংসটি শুধু লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পায়। এরপর প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮১ রান করেন তিনি।
বিশ্বকাপে ভালো করায় তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে (অন্য দুজন সালমা খাতুন ও জাহানারা আলম) নারী আইপিএলে খেলার সুযোগ পাচ্ছেন সুপ্তা। ২৩ মে শুরু হতে চলা টুর্নামেন্টে তাঁর দল এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে বড় মঞ্চে সুযোগ পাওয়াকে অন্য রকম প্রাপ্তি হিসেবে দেখছেন তিনি। আজকের পত্রিকাকে বাংলাদেশ ওপেনার বলেন, ‘ছেলেদের ক্রিকেট ক্ষেত্রে হোক কিংবা মেয়েদের, বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হচ্ছে আইপিএল। সেখানে খেলার সুযোগ পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। অনুভূতিটা অন্য রকম।’
আইপিএলে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে গর্বিত গাইবান্ধার মেয়ে সুপ্তা, ‘এটা গর্ব করার মতো। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশ ও প্রতিযোগিতার সঙ্গে পরিচিত হওয়া। নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা।’
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অভিজ্ঞতা জাতীয় দলে কাজে লাগবে বলে মনে করেন সুপ্তা, ‘এ ধরনের বিশ্বমানের টুর্নামেন্টের একেকটি ম্যাচে একেক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেললাম। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব আছে। এর আগে আইপিএল আমার খুবই কাজে দেবে। আমরা কোন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলি, অন্যরা কীভাবে খেলে ও প্রস্তুতি নেয়, ব্যাটার হিসেবে তাদের সঙ্গে আমার পার্থক্য কোথায়, সেসব আইপিএল খেলে বুঝতে পারব। আরও উন্নতি ও ভালো করার তাড়নাও থাকবে।’
সুপ্তার বিশ্বাস, যত বেশি খেলার সুযোগ পাবেন, অভিজ্ঞতা তত বাড়বে। সে ক্ষেত্রে আইপিএল বড় সুযোগ। কেননা নারী ক্রিকেটে এশিয়ায় ভারতই সবচেয়ে এগিয়ে। তাদের ক্রিকেটীয় সংস্কৃতি ও খেলোয়াড়দের মানসিকতা জানতে পারার সুযোগ কাজে লাগাতে চান তিনি। এই সুযোগ পাওয়ার পেছনে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স সহায়ক ছিল মনে করেন সুপ্তা, ‘নিশ্চিতভাবে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স কাজ করেছে। আমি পাকিস্তান ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে পারফর্ম করেছি।’
নিজে ভালো করলেও বাংলাদেশ একটির বেশি ম্যাচ জিততে না পারায় কিছুটা আক্ষেপ আছে সুপ্তার, ‘একটা জিনিস হলো নিজে ভালো খেলা, আরেকটা হলো দল জেতা। নিজে ভালো খেললে ভালো লাগে। দল জিতলে আরও ভালো লাগে। তবে নিজে ভালো খেলে দলকে জেতানোর অনুভূতি সবকিছুর ঊর্ধ্বে।’