তাঁর আছে ছাদসহ পাকা বাড়ি। সেই বাড়ির গোয়ালঘরে পালন করছেন দেশি-বিদেশি জাতের পাঁচটি গরু। আরও আছে হালচাষের জন্য কলের লাঙল। আবাদ করেন ১০ থেকে ১২ বিঘা জমি। অথচ তিনি ভূমি ও গৃহহীন হিসেবে বরাদ্দ পেয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। সেই ঘরও আবার তাঁর পাকার বাড়ির পাশেই।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সাদিশপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে এভাবে ঘর বাগিয়ে নিয়েছেন বেলাল হোসেন বাবু। তিনি সাদিশপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প সমিতির সভাপতির পদে আছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বাবু শুধু নিজের নামে ঘর বরাদ্দ পাননি। সেই সঙ্গে তাঁর অবিবাহিত বড় ছেলে এবং আরেক স্ত্রীর নামেও দুটি ঘর পেয়েছেন।
সরেজমিন আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেখা গেছে, এখানে ২৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ১২টি ঘরের কাজ চলছে। তবে সুবিধাভোগী সবাইকেই গত এপ্রিলে ঘর ও জমির মালিকানার দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ ঘর আপনজনের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প সমিতির সভাপতি বাবুর বৃদ্ধ বাবা জিল্লুর রহমান, দুই স্ত্রী, ছেলে পলাশ, মেয়ে রেবেকা পারভিন ও বোনের স্বামী ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন।
বাবুর বাড়ির পাশের শহিদুলেরও রয়েছে পাকা বাড়ি। তাঁকেও দেওয়া হয়েছে সরকারি ঘর।
স্থানীয় আব্দুল জব্বারে নিজের পাশাপাশি তিন ছেলে আসিদুল, পেন্টু ও রফিকুল, জামাই রেজাউল, নাতনির জামাই নাজমুল ও অবিবাহিত নাতির নামেও ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। মোট সাতটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
এলাকার বাসিন্দা দুই ভাই লিটন ও মিঠুন ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। আবার তাঁদের দুই ছেলে রুহুল আমিন ও মুরশিদের নামেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রুহুল অবিবাহিত।
সম্প্রতি বাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া টিউবওয়েল বসানোর কাজ তদারকি করছেন। তখন তাঁর স্ত্রী পলি আরা নিজেদের পাকা বাড়িতে সাংসারিক কাজ করছিলেন। পলি বলেন, তাঁরা আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে দুটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। এর মধ্য একটি বড় ছেলে পলাশের নামে। পলাশ ঘরটিতে থাকছেন। অপর ঘরটির নির্মাণকাজ তাঁদের বাড়িসংলগ্ন জায়গায় চলছে।
পাকা বাড়ি থাকার পরও সরকারি ঘর বরাদ্দ পাওয়ার বিষয়ে বাবু বলেন, ‘সরকার দিয়েছে তাই পেয়েছি। এতে আপনাদের সমস্যা হচ্ছে কেন?’
একই গ্রামে ঘর না থাকায় উঠানে চৌকি ফেলে বসবাস করছেন হাফিজুল ইসলাম। তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ চেয়েও পাননি। তিনি বলেন, ‘আমার মতো সত্যিকারের ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যক্তিরা গৃহ বরাদ্দ পাইনি।’
ঘর না পাওয়া আরেক ব্যক্তি শাহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের জরাজীর্ণ বাড়ি। ঘরের অভাবে ঘুমাতে পারি না। অথচ একই পরিবারের সবাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহ পেয়েছেন।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে উপজেলায় মোট ৪৬টি গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্য সাদিশপুর মৌজায় ৪০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। গৃহ বরাদ্দ কারা পেয়েছেন, সেটি ইউএনও স্যার ভালো বলতে পারবেন।’
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সভাপতি বাবুর দুই স্ত্রী। তাঁরা আলাদা থাকেন। তাঁর বড় ছেলে বিবাহযোগ্য। এ কারণে বাবুর পরিবারে গৃহ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দে কোনো অনিয়ম হয়নি।’