ডুমুরিয়া উপজেলার অধিকাংশ নদী ও খালবিলগুলো গত কয়েক বছর ধরে কয়েকজন ব্যক্তি দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। এতে এলাকার দরিদ্র মানুষ ও মৎস্যজীবীরা পড়েছেন বিপাকে।
এ ছাড়া খালগুলো উন্মুক্ত না থাকায় চাষিরা কখনো পানি পাচ্ছেন না আবার কখনো পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ধানখেত। তবে দখলদারদের হাত থেকে খালগুলো মুক্ত করার লক্ষ্যে ভুক্তভোগীরা সম্প্রতি খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, এলাকার অধিকাংশ কৃষকেরাই থুকড়া ও মাধবকাটি বিলের শেয়ার বাওয়া খাল, পচা খাল, তুলোপোতা খালসহ বিলাঞ্চলের খাল বিল হাওড় বাঁওড়ে মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
গত কয়েক বছর ধরে এলাকার মুষ্টিমেয় কিছু লোক গরিব মানুষের এই জীবিকার পথ রোধ করে ব্যক্তিস্বার্থে এসব খাল দখল করে বাঁধ নির্মাণ ও নেট পাটার মাধ্যমে মাছ চাষ করে আসছে। এতে এলাকার দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জীবিকা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, খালগুলো উন্মুক্ত না থাকায় এলাকার কৃষকেরা সুষ্ঠুভাবে ধান চাষ করতে পারছেন না। সময় মতো পানি নিষ্কাশনের সুযোগ না থাকায় অনেক জমি জলাবদ্ধতায় অনাবাদি পড়ে থাকে।
ইরি-বোরো (শুকনো মৌসুমে) এসব জমি থেকে সেচ দিয়ে পানি সরিয়ে অনেক দেরিতে ফসল ফলানোর চেষ্টা করা হয়।
অতি কষ্টে কৃষকের উৎপাদিত সেই ফসলও খালের চাষ করা মাছে খেয়ে ফেলছে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
সরেজমিনে কোল বিল ও ঘেংরাইল নদী ঘুরে দেখা যায়, সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে মাঠের অধিকাংশ ফসল ডুবে অবস্থায় রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় শিম, বরবটি, বেগুন, উচ্ছে, ঢ্যাঁড়স, লাউ, কুমড়া (জালি) ইত্যাদি সবজি গাছগুলি মরে যাচ্ছে।
যেসব গাছ বেঁচে আছে তাও হলুদ হয়ে গেছে। পানি অন্তত ১ হাত না কমলে এই বিলে নতুন করে বীজ রোপণ করা যাবে না। অথচ প্রায় ২-৩ সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও পানি নিষ্কাশনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এ সময় ভুক্তভোগী কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, খালগুলো উন্মুক্ত না থাকার ফলে আমরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আশানুরূপ ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। অধিক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয়ে যে ফসল পাই তাতে উৎপাদন খরচও উঠছে না। ইতিপূর্বেও এর সুব্যবস্থার দাবিতে এলাকার কৃষকেরা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছে। তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি।’
কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাধবকাটি বিলের পানি প্রবাহে বাঁধ দেওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে অন্তত দুই থেকে আড়াই শ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। বাকি জমিগুলো কৃষকেরা হারিতে নিয়ে চাষাবাদের পর অনেক সময় হারির টাকাও ওঠাতে পারেন না।
খাল দখল বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান খান শাকুর উদ্দিন বলেন, ‘কৃষকদের ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। যত দ্রুত সম্ভব এর সমাধান করা হবে। এলাকার চাষিরা মনে করেন পানি নিষ্কাশন বিষয়ে সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নিলে এ অঞ্চলের কৃষকদের কৃষি পণ্য উৎপাদনের পথ সুগম হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘ডুমুরিয়ার নদী ও খাল থেকে একাধিক বার নেট-পাটা অপসারণসহ জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গত মৎস্য সপ্তাহে আমি ও ভূমি কর্মকর্তা বিভিন্ন নদী ও খাল থেকে নেট পাটা অপসারণ করেছি। তবে এটি বৃহত্তর উপজেলা হওয়ায় নদী ও খাল বিলের সংখ্যা বেশী। এ কারণে সকল স্থানের নেট-পাটা অপসারণ করা সম্ভব হয় নি। তবে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’