পঞ্চগড়ে চা পাতার গুণগত মান রক্ষায় আড়াই থেকে তিন পাতা সরবরাহের নির্দেশনা দিয়েছে চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটি। নিলামে ভালো দাম পেতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। অনেক চাষি তিন পাতা তোলা শুরু করলেও কেউ কেউ বিপাকে পড়েছেন।
চা বোর্ড এবং কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, সচেতনতা ও বিজ্ঞানভিত্তিক চা চাষের অভিজ্ঞতা না থাকায় চা-চাষিরা কাঁচি-দা দিয়ে কেটে চা গাছের ছয় থেকে সাত পাতা সরবরাহ করেন। অথচ চায়ের গুণগত মান এবং রাসায়নিক দ্রব্যগুলো ঠিক রাখার জন্য হাত অথবা মেশিন দিয়ে চা পাতা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। দেশের অন্য জেলায় হাত ও মেশিন দিয়ে ৩ থেকে ৪ পাতা তোলা হলেও পঞ্চগড়ে ৬ থেকে ১০ পাতা তোলার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তাই চায়ের অকশন বাজারে পঞ্চগড়ের চায়ের দাম কমে গেছে।
জেলার বিসমিল্লাহ টি ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মিঞা বলেন, ‘চাষিরা ডালসহ ৭ থেকে ৮ পাতার চা পাতা নিয়ে আসে। এতে কারখানায় জ্যাম হয়ে যায়। চা পাতার মান নষ্ট হয়। নিলাম মার্কেটে সিলেটের চা বিক্রি হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। মান খারাপ হওয়ার কারণে পঞ্চগড়ের চা বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। এখন অনেক চাষি ৩ থেকে ৪ পাতার কাঁচা চা পাতা দিচ্ছেন। তাঁদের আমরা নির্ধারিত দাম দিচ্ছি।’
তেঁতুলিয়ার সফল চা চাষি কাজী আনিস বলেন, ‘প্রথম থেকেই চাষিদের বড় পাতা সরবরাহের অভ্যাস হয়েছে, বড় পাতা কাঁচি দিয়ে কাটলে গাছের যেমন ক্ষতি হবে, পাশাপাশি বড় পাতার চা মানসম্মত না হওয়ায় নিলাম মার্কেটে দরপতন হচ্ছে।’
চাষিদের আন্দোলনের মুখে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য ১৮ টাকা নির্ধারণ করে চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটি। এর সঙ্গে চা চাষিদের ৩ থেকে ৪ পাতা সরবরাহ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড়ের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, ‘চায়ের গুণগত মান ঠিক রেখে চা পাতা কাটার জন্য আমরা চা চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। আমরা সব চাষিকে আড়াই থেকে তিনটি কাঁচা চা পাতা সরবরাহ করতে বলি। কিন্তু অনেক চাষি তা মানেন না। ছয় থেকে সাতটি কাঁচা চা পাতা থেকে ভালো মানের চা পাতা তৈরি সম্ভব নয়। কারখানা কর্তৃপক্ষের এসব চা নেওয়া ঠিক নয়।’
চায়ের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভাপতি এবং পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক চা চাষি নির্ধারিত মানের (সাড়ে তিন থেকে চার পাতা) বাইরে পাতা দিচ্ছেন। যাঁরা ভালো মানের পাতা দিচ্ছেন, তাঁরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। আমরা বেশ কয়েকটি কারখানা পরিদর্শন করেছি। আশা করি, নির্ধারিত মূল্যের কম দামে পাতা কেনার অভিযোগ আর থাকবে না।’