দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে রাত যাপন করতে হয় বিধবা ছায়া বড়ুয়ার (৩২)। স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে অর্থশূন্য হয়ে পড়েন তিনি। অর্থের অভাবে ঘর ঠিক করতে না পারায় এখন সন্তান নিয়ে নিরাপদে রাত যাপনের নিশ্চয়তা নেই তাঁর। বৃষ্টিতে ঘরে পানি আসে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বাবুছড়াবাজার এলাকায় বসবাস করেন ছায়া বড়ুয়া। তাঁর বড় মেয়ে পিয়াংকা বড়ুয়ার বয়স ১১ বছর ও ছোট মেয়ে অর্থি বড়ুয়ার ৭ বছর।
উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে বাবুছড়া বাজার। বাজারের পাশের একটি গলিতে জরাজীর্ণ ঘরে মেয়েদের নিয়ে থাকেন ছায়া বড়ুয়া। তাঁর স্বামী প্রদীপ বড়ুয়া (৩৬) গত ১৮ জানুয়ারি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর দুই কন্যাকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন ছায়া বড়ুয়া।
সম্প্রতি বাবুছড়া বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ছায়া বড়ুয়া ও তার মেয়েকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার আগে ছায়া বড়ুয়ার স্বামীর কিডনি রোগ ধরা পড়ে। তাঁর চিকিৎসার জন্য দুইবার ভারতের চেন্নাই নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি প্রদীপ বড়ুয়াকে। কিন্তু চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবার অর্থশূন্য হয়ে পড়ে। উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছে তারা।
এদিকে প্রদীপ বড়ুয়ার মৃত্যুর পর পরিবারটি দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন ছোট ভাই নয়ন বড়ুয়া। তিনি বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) সিগন্যাল অপারেটরে চাকরি করেন।
নয়ন বড়ুয়া জানান, স্ত্রী ও মা-বাবা নিয়ে বসবাস করছেন। সেই সঙ্গে বড় ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ করতে গিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।
নয়ন বড়ুয়া বলেন, ‘কষ্ট হলেও তো আর ভাইয়ের স্ত্রী ও কন্যাদের ফেলে দিতে পারব না। সরকারি চাকরিতে কত টাকাই আর বেতন পাই। সরকারি কোনো সহায়তা পেলে ভাইয়ের রেখে যাওয়া পরিবারটি নিরাপদে থাকতে পারবে।’
ছায়া বড়ুয়া বলেন, ‘বড় মেয়ে পিয়াংকা বড়ুয়া দক্ষিণ বাবুছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট মেয়েকে এখনো বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। আমাকে উপার্জন করার জন্য মানুষের বাসায় কাজ করতে হয়। আর ঘরে থাকার মতো একটি ছাগল ও কয়েকটি হাঁস-মুরগি পালন করে থাকি।’
ছায়া বড়ুয়া আরও বলেন, ‘টাকা-পয়সা না থাকায় বসতঘর সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্ষায় ঘরে পানি আসে আর ঘর দিয়ে ঠান্ডা বাতাসে সন্তানেরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোনো রকম বেঁচে আছি।’