রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণে মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলা। প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চল সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ। সে সময় থেকে শ্রীনগরে যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহনে ঘোড়ার গাড়িই ছিল যোগাযোগের একমাত্র বাহন। কালের পরিক্রমায় আধুনিকতার স্পর্শে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি। গ্রামগঞ্জের আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলা ঘোড়ার গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহনের জাঁতাকলে বর্তমানে এ যান বিলুপ্তির পথে।
জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকে গাঁওগ্রামে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো ঘোড়ার গাড়ির অবকাঠামো। আর কাঠ কেটে পুরিয়ে গোলাকার করে পেরেক মেরে তৈরি করা হতো চাকা। ওই গাড়িকে টেনে নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো ঘোড়াকে। কালের আবর্তে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার কমে যেতে থাকলেও এখনো আধুনিক সব যানবাহনের জন্য তৈরিকৃত সব ইঞ্জিনের ক্ষমতাকে ঘোড়ার শক্তি (অশ্বশক্তি) হিসাবে পরিমাপ করা হয়ে থাকে।
বর্তমানে দেশের গ্রামীণ জনপদের বেশির ভাগ কাঁচা ও মেঠো পথ/সড়ককে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ওই সব সড়ককে পিচ-পাথর দিয়ে পাকা সড়কে রূপদান করা হয়েছে। সড়কে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে জায়গা করে নিয়েছে ইঞ্জিনচালিত যানবাহন।
উপজেলার চরাঞ্চলে সড়কে মালামাল পরিবহনে দু-একটি ঘোড়ার গাড়ির দেখা মিললেও দিন দিন তা-ও হ্রাস পাচ্ছে। তবে এ সময়ে এসেও উপজেলার বাঘড়া ইউনিয়নের রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি চালান শামসুদ্দিন মাদবরের ছেলে ফজর মাদবর। কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
ফজর মাদবর বলেন, ‘ইউনিয়নের আলামিন বাজারে আমরা চারজন এই গাড়ি চালাই। আগে আমার দাদা ও বাবা এই ঘোড়ার গাড়ি চালাতেন। এখন আমি চালাই, কিন্তু আগের মতো এখন আর মালামাল বহন করা হয় না। প্রতিদিন ঠিকমতো ট্রিপ পাই না, তাই গাড়ি চালানোর পাশাপাশি দিনমজুরের কাজও করি। প্রতিদিন ঘোড়ার খাবারে যেই টাকা খরচ হয়, মাঝে মাঝে তা-ও জোগাড় করতে পারি না।’