সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের লাখো মানুষ যখন বন্যার কবলে দিশেহারা, তখনো রাজশাহী অঞ্চলের ছোট নদ-নদীগুলো পানিশূন্য। এ বর্ষাতেও পানি নেই বড়াল নদে। অথচ এ নদ ঘিরেই রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার যোগাযোগব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয়েছিল। তখন দুকূল প্লাবিত করে বয়ে যেত বড়াল। কিন্তু উৎসমুখে বালুর স্তূপ থাকায় এ নদ এখন বর্ষাকালেও পানিশূন্য।
জানা গেছে, রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মার শাখা হিসেবে উৎপন্ন হয়ে বড়াল নদ বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, চাটমোহর, ভাঙ্গুরা ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বাঘাবাড়ী হয়ে হুড়াসাগরের বুকে মিশে নাকালিয়ায় পড়েছে যমুনায়।
এক সময় যে বড়ালের এ কূল-ওকূল দেখা যেত না, বন্যার সময় প্রচণ্ড বেগে পানি প্রবাহিত হতো। সঙ্গে কৃষকের জন্য বয়ে নিয়ে আসত পলি মাটি। সেখানে এখন পানি নেই, নেই মাছও। এখন সে শুকনো, মৃতপ্রায় এক নদ।
স্থানীয় বড়াল রক্ষা আন্দোলনের নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে খননসহ নদটি রক্ষায় সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো বড়ালের উৎসমুখে বালু মহাল স্থাপন, বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ এবং যাতায়াতের জন্য নদের বুক চিড়ে রাস্তা নির্মাণ করে স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে ঐতিহ্যবাহী বড়াল মরা খালে পরিণত হয়েছে। সরকারি নজরদারি না থাকায় ভূমিদস্যুরা মাটি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে দুই পাড়। পাশাপাশি স্রোত না থাকায় নদের বুকে পলি জমে এর গভীরতা কমে গেছে। এ কারণে দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে উভয় দিকেই শীর্ণ হয়ে গেছে বড়াল। এ জন্য এখন বর্ষা মৌসুমেও বড়াল ফসলের মাঠ।
অপর দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, বড়ালে পদ্মার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখতে এবং নাব্য ফিরিয়ে আনতে এ নদকে ঘিরে গত ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ‘নাটোরের নারদ ও মুসা খান (আংশিক) নদী ও রাজশাহীর চারঘাটের রেগুলেটরের ইনটেক চ্যানেল খনন’ নামে ১৩ কোটি ৩ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রায় ১৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার নদী খনন ও প্রবেশ মুখে খনন করতে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চারঘাটে বড়াল নদীর ইনটেক চ্যানেল খনন কাজ শেষ হয়। কিন্তু বড়ালের সুদিন ফেরেনি।
বড়াল পাড়ের বাসিন্দা চারঘাটের মিয়াপুর গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আষাঢ় মাসে পদ্মা নদী পানিতে টইটম্বুর। কিন্তু বড়াল নদে পানি নাই। অথচ ১০-১৫ বছর আগে চৈত্র মাসেও প্রচুর পানি থাকত।
উপজেলার পুঠিমারি এলাকার বাসিন্দা জেলে আব্দুল মতিন বলেন, ‘এখন দেশের অন্য এলাকার নদী পাড়ের মানুষ বন্যায় অসহায় জীবন যাপন করছে। আর আমরা হাজারো জেলে বড়ালে পানি না থাকায় বেকার হয়ে বসে আছি।’
বড়াল রক্ষা আন্দোলনের চারঘাট উপজেলার সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, ‘পাউবোর কাছে বড়ালের উৎসমুখ খনন ও স্লুইসগেট অপসারণসহ একাধিক দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। পুরো মৌসুমেই বড়াল পাড়ের মানুষ চরম পানি কষ্টে ভুগছে।’
বড়াল নদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী খালেদ বিন অলীদ বলেন, বড়ালের উৎসমুখে বালুর স্তূপের কারণে পানি প্রবাহ সঠিকভাবে হচ্ছে না। প্রতি বছরই ওই উৎসমুখ খনন করা উচিত। কিন্তু আপাতত সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বড়ালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে একটি প্রকল্প পাউবোতে পাঠানো হয়েছে। সেটা অনুমোদন পেলে, বড়াল নদ ঘিরে কার্যক্রম শুরু হবে।