বয়সের ভারে কিছুটা কাহিল তিনি। বাম পা নেই। তবু শরীরের এই ঘাটতি ষাটোর্ধ্ব রতন মিয়ার কাছে তুচ্ছ। সড়ক দুর্ঘটনায় এক পা হারানোর পর থেকে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চা-দোকান করে জীবনযুদ্ধে টিকে আছেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার খাতাবাড়ী এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে ছোট একটি টং দোকানে চা, পান, সিগারেট বিক্রি করেন তিনি। দোকানটির এক পাশে একটি রুমে বাস করছেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে।
এর আগে তিনি সংসার চালাতেন জেলা শহরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা (সিএনজি) চালিয়ে। পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস পাড়ায়। ২০০৮ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর বাম পা হারান। সেই থেকে বাড়িতে এসে চায়ের দোকান দিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন তিনি।
রতন মিয়া জানান, পাঁচ সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর তিন ছেলের মধ্যে ছোট ছেলেও মানসিক প্রতিবন্ধী। বাকি দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। বর্তমানে একমাত্র এই দোকানটিই এখন তাঁর ভরসা। প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে যা পাচ্ছেন তা দিয়ে ওষুধের খরচই হয় না। শারীরিক সামর্থ্য না থাকলেও পেটের দায়ে দোকান চালাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কাটা পা নিয়ে দোকান চালানো অত্যন্ত কষ্টের। একটা হুইলচেয়ার পেলে ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারতাম।’
তাঁর দোকানে প্রতিদিন আসেন পাশের মসজিদের ইমাম মো. ফারুক মুনশি। তিনি বলেন, ‘রতন মিয়ার চা অন্যান্য দোকান থেকে যথেষ্ট ভালো। এ জন্য প্রতিদিন এখানে আসা। তার অভাবের সংসারে সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পেলে একটু ভালোভাবে চলতে পারত।’
বিজয়নগর প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি শামসুল ইসলাম লিটন বলেন, দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে ভিক্ষা না করে চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন–এটা সবার জন্য অনুকরণীয়। তাঁর প্রতিবন্ধী ছেলের ভাতার জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তাঁরাও ভাতার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।