প্রত্যন্ত গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসান সিকদারের। স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে দারিদ্য ঘোচাবেন। সেই স্বপ্ন পূরণে পড়ালেখা ও সংসারের খরচ জোগাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি মার্কেটে লাইব্রেরিতে কাজ নেন। কিন্তু স্বপ্নপূরণের আগেই পুলিশের গুলিতে চিরবিদায় নিতে হয় এ যুবককে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই বেলা ১১টার দিকে কাজ সেরে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন হাসান। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
চাঁদপুরের কচুয়ার কড়ইয়া ইউনিয়নের তুলাতলি গ্রামের কবির হোসেনের ছেলে হাসান। পেশায় শ্রমিক কবির বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন কর্মক্ষম। হাসানের মা হালিমা বেগম গৃহিণী। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট দুই বোনের একজন কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে এবং অপরজন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। পরিবারের উপার্জন করা ব্যক্তি না থাকায় বাধ্য হয়ে হাসান কাজ শুরু করেন।
হাসানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মো. তারেক বলেন, ‘আমি ও হাসান মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মনোহরপুর উচ্চবিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়েছি। এসএসসি উত্তীর্ণ হওয়ার পর আমি কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি সরকারি কলেজ এবং হাসান রহিমানগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়।
একাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর হাসানদের সংসারে অভাব প্রকট হয়ে ওঠে। কারণ তার বাবা এলাকায় কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তার বাবার চিকিৎসা খরচের জোগানো হয়। এ বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগে আমি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেও হাসান পারেনি। সংসারের অভাবের কারণে কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে যায় হাসান।’
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা হালিমার চোখমুখে অনিশ্চয়তার চাপ। তিনি বলেন, ‘ছেলে আমার মেধাবী ছিল। সংসারের হাল ধরার জন্য এ বছর পরীক্ষা না দিয়ে লাইব্রেরিতে কাজ নেয়। ঢাকায় থাকলেও আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। ১৭ জুলাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমরা প্রতিবেশী একজনের মাধ্যমে খবর পাই। এরপর ঢাকায় রওনা হই। আন্দোলনের কারণে কাঁচপুর ব্রিজের পরে আর যেতে পারিনি। পরে হেঁটে হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি আমার ছেলে আইসিইউতে। চিকিৎসকেরা বলছিলেন, ৭২ ঘণ্টা দেখবে। প্রথমে তার মাথায় অপারেশন, পরে চোখে অপারেশন করবে। কিন্তু ১৮ জুলাই রাত ১০টার দিকে ছেলে মারা যায়।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রত্যেক শহীদ পরিবারের জন্য সরকারি যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেসব নির্দেশনা আমরা বাস্তবায়ন করছি। আমি নিজে এবং উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওরা খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং সহায়তা করছেন।’