নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের শামুকখোলা গ্রামের বাবু আলীর ছেলে শাহিন(৩০)। লোহাগড়ার মানিকগঞ্জ বাজারের প্রাণ কেন্দ্র সুপার মার্কেটের সামনে ছোট একটি দোকানে বসে চা বিক্রি করেন তিনি।
বিশ বছর ধরে চা বিক্রি করছেন শাহিন। বাবার হাত ধরে দোকানে আসলেও এখন তিনিই উত্তরসূরি। চা বিক্রি করতে করতেই একদিন বিশেষ ধরনের রোসপিতে ‘র’ চা তৈরি শুরু করেন। ছোট শহর লোহাগড়ার সর্বত্র শাহিনের চায়ের কথা চাউর হয়ে যায়। শহরে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই রং চা। ব্যাংক, বিমাসহ অন্যান্য অফিস গুলো থেকেও অর্ডার আশা শুরু হয়। শীতের কনকনে হাওয়ায় শাহিনের রং চা বাড়তি আমেজ এনে দেয়। শাহিন জানালেন তাঁর চায়ের রহস্য। খাঁটি মধু দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তিনি এ চা তৈরি করেন।
শাহিনের ‘র’ চা। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সবার কাছে সমাদৃত। বিশেষভাবে তৈরি এই রং চা লোহাগড়াসহ বিভিন্ন শহর থেকে আগত মানুষের কাছেও পরিচিতি পেয়েছে। চায়ের সঙ্গে কফিও বিক্রি করেন তিনি। দুধ চা, রং চা এবং কফি এ তিনে মিলেই তাঁর ব্যবসা।
চার ভাই-বোনদের মধ্যে বড় সে। বোনের বিবাহ দিয়েছেন। মা-বাবা ভাই-বোন নিয়ে সংসার মোটামুটি ভালোই চলছে। তাঁর নিজের রয়েছে তিনটি কন্যা সন্তান। সবাইকে নিয়ে সুখেই দিন কাটছে তাঁর। এই চা বিক্রি করেই পরিশ্রমী শাহিন পুরো সংসারের হাল ধরছেন।
ভোর না হতেই উনুনে গরম পানি বসাতে হয় দোকানে। রাত ১০টা পর্যন্ত বিরতিহীন জলে বেচা কেনা। প্রতি দিন ৪০০-৫০০কাপ চা বিক্রি হয়। ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫ শ টাকা আয় হয় তাতে। শাহিন জানালেন, এ আয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাসহ সবাইকে নিয়ে ভালোই কেটে যায় তাঁর সংসার। নিজে এ পেশায় জড়িত থাকলেও মেয়েদের পড়ালেখা শিখিয়ে শিক্ষিত করতে তুলতে চান শাহিন।
লোহাগড়া উপজেলার মরিচ পাশা গ্রামের মো. সেকেন্দর মোল্লা বলেন, ‘আমি প্রতিদিন সকাল বিকেল ২ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে মানিকগঞ্জ বাজারে শাহিনের দোকানে চা পান করার জন্য যাই। আমার মতো শত শত লোকজন চা পান করতে আসে এ দোকানে। তাঁর চায়ের কোনো জুড়ি নেই। এক চুমুকে তৃপ্তিতে ভরে যায় মন।
শামুকখোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক টগর আলী বলেন, ‘আমরা শাহিনের দোকানের চা পান করি এবং অনেক তৃপ্তি পাই। আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা ও কোনো অতিথি আসলে তাঁরাও এই দোকানের চা পান করতে ভালোবাসেন।’