রাজশাহীর সর্ববৃহৎ আমের মোকাম পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার। এই মোকামের ১২৬ জন ব্যবসায়ীর একটি চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ার অভিযোগ স্থানীয় আম বিক্রেতাদের। চক্রটি কয়েক বছর ধরে বিক্রেতাদের ওপর ঢলন প্রথা চালু করেছেন। গত বছর প্রতি মণে ১০ কেজি পর্যন্ত ঢলন নেওয়া হয়েছে। এবার আরও এক কেজি বাড়িয়ে কেউ কেউ নিচ্ছেন ১১ কেজি ঢলন।
চাষিরা বলছেন, বাজারের আম ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁরা একরকম জিম্মি। বিষয়টি বাজার কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেও কোনো সুফল মিলছে না। ঢলন প্রথা বাতিল করতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে প্রতিবছর দু-এক দিন আনুষ্ঠানিক সভা-সমাবেশ করে বাজার কমিটি ও উপজেলা প্রশাসন। বাস্তবে এর সুফল পাওয়া যায় না।
গতকাল রোববার সকালে বানেশ্বর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমের বেশির ভাগ ক্রেতা হচ্ছেন স্থানীয় ফড়িয়া ও আড়তদার। দু-চারজন ব্যবসায়ী আছেন বহিরাগত। তাঁরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে আম কিনছেন মণ হিসেবে। আর প্রতি মণ গড়ে ৫০ থেকে ৫১ কেজি হিসাবে কিনছেন। এতে বিক্রেতাকে প্রতি মণে ঢলন দিতে হচ্ছে ১০-১১ কেজি।
আমবাগানের মালিক মজনু ইসলাম বানেশ্বর বাজারে আম বিক্রি করতে এসেছেন। তিনি বলেন, বাজারে আম বিক্রি করতে এসে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয়। তাঁরা যেভাবে পারছেন বিক্রেতাদের লুটছেন। কয়েক বছর আগেও ৪৫ কেজিতে এক মণ আম ধরা হতো (যদিও ৪০ কেজিতে এক মণ)। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০-৫১ কেজিতে।
মো. রিপন নামের আরেক আম বিক্রেতা বলেন, এই বাজারে আম বিক্রি করতে হলে চাষিদের কয়েকটি ধাপে ভর্তুকি দিতে হয়। এর মধ্যে আড়তদার ঢলন নেন প্রতি মণে ৯ কেজি। ওজনকারী প্রতি মণ মাপার আগে শোলার নামে বড় দুটি আম আলাদা করে রাখেন। এরপর ওই ওজনকারীরা বাড়িতে খাওয়ার কথা বলে সব বিক্রেতার কাছ থেকে দুই-তিনটা আম নেন। এরপর আম বিক্রির দাম পরিশোধ করার সময় হিসাবরক্ষক কমিশন হিসেবে ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত কেটে নেন।
তবে বাজারের আম ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখানে কোনো বিক্রেতার কাছ থেকে জোর করে আম নেওয়া হয় না। কেনার সময় তাদের বলা হয় প্রতি মণে কত কেজি ঢলন দিতে হবে। তাদের ইচ্ছা হলে দেবেন, না হলে নয়।
এ বিষয়ে বানেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ী ও হাট ইজারদার ওসমান আলী বলেন, ‘আম কাঁচামাল। এটার কিছু ভর্তুকি আছে। এই অজুহাতে ব্যবসায়ীরা মণ হিসাবে অতিরিক্ত কিছু আম নেন। ঢলন প্রথা তুলে দিতে ব্যবসায়ীদের কেজি দরে আম কিনতে বলা হয়েছে। তবে বিভিন্নভাবে সেটা কার্যকর হচ্ছে না।’