সুতা ও অন্যান্য উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুঁজি-সংকটের কারণে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রায় দেড় শ কারচুপি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন পাঁচ সহস্রাধিক কারিগর। পরিবার নিয়ে তাঁরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
কারচুপিশিল্প সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শহর ও গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠে তিন শতাধিক কারচুপি কারখানা। এসব কারখানায় কাঠের ফ্রেমে শাড়ি, পাঞ্জাবি, ওড়নাসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাকে কারচুপি ও নকশার কাজ করেন প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষ। এ ছাড়া বাড়িতেও কাজ করেন কেউ কেউ। স্কুল-কলেজের ছাত্রীরাও পড়াশোনার ফাঁকে এ কাজ করে বাড়তি আয় করেন। এখানকার কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি মনকাড়া ডিজাইনের এসব পোশাক স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় রাজধানীসহ দেশের বড় বড় বিপণিকেন্দ্রে। তবে পুঁজি-সংকটের কারণে সম্প্রতি দেড় শ কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকেরা।
সৈয়দপুর শহরের রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা রোজিনা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনিই পরিবারের হাল ধরেন। তবে তিনি যে কারখানায় কাজ করতেন, সম্প্রতি সেটি বন্ধ হয়ে যায়। রোজিনা বলেন, ‘লোকসানের জন্য মালিক কারখানা বন্ধ করে দেইল। এলাই হামার কামকাজ নাই। কেমন করি সংসার চলিবে। ছোট দুই খান ছাওয়াক নিয়া না খায়া মরির নাগিবে।’
রোজিনার মতো কাজ হারিয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে আরও অনেকের। শহরের গোলাহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গড়ে ওঠা কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। মনতাজ কারচুপি কারখানার মালিক মনতাজ হোসেন বলেন, ‘গোলাহাট ও উত্তরা আবাসন এলাকায় আমার তিনটি কারখানা ছিল। প্রতিটি কারখানায় ২০-৩০ জন কারিগর কাজ করতেন। বর্তমানে দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বৈধ ও অবৈধ পথে কারচুপির কাজ করা নিম্নমানের পোশাক আসছে এই অঞ্চলে। দামে কম হওয়ায় এসব পোশাকের প্রতি ঝুঁকছেন ক্রেতারা। এতে করে স্থানীয়দের তৈরি কারচুপির পোশাকের চাহিদা ব্যাপক কমেছে।’
মনতাজ হোসেন বলেন, ‘আবার দেশীয় বাজারে সুতাসহ উপকরণের দাম অনেক বেড়েছে। এতে বিনিয়োগ করে পুঁজি তুলতে না পারায় তিনটির মধ্যে দুটি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছি।’ এ শিল্প রক্ষায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান মনতাজ।
রসুলপুর এলাকার মঞ্জুর কারচুপি কারখানা মালিক মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘তৈরি পোশাক বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহনের সময় কুরিয়ারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই এ ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।’
শহরের ইসলামবাগ বড় মসজিদ এলাকার কারিগর আরিফ হোসেন বলেন, ‘আগে কাজের প্রচুর চাপ ছিল। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হতো। কিন্তু এখন কাজ নেই বললেই চলে। ফলে আয় কমেছে। অন্যদিকে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে। পাশের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। দুশ্চিন্তায় আছি আমার কারখানাও মালিক না জানি কবে বন্ধ করে দেন।’
এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় নতুন এসেছি। এ শিল্প সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনে মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যাগুলোর সমাধান করব।’