বাজারে আলুর দাম খরচের তুলনায় অনেক কম। তাই লোকসানের আশঙ্কায় হিমাগার থেকে প্রায় আড়াই লাখ বস্তা আলু বের করতে চাচ্ছেন না চাষি ও ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর রাজশাহীর পুঠিয়ায় তিনটি হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারীদের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার তিনটি কোল্ডস্টোরেজ ঘুরে দেখা গেছে, হাতে গোনা দু-চারজন সংরক্ষণবাদী স্টোর থেকে তাঁদের আলু বের করছেন। তাঁদের বেশির ভাগ সংরক্ষণবাদী বহিরাগত ব্যবসায়ীদের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করছেন। আর কয়েকজন স্থানীয় খুচরা আলু ব্যবসায়ীর কাছে দর-কষাকষি করে বিক্রি করছেন ১৩ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলুর চাষ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ৫০০ টন। এর মধ্যে বিএডিসি বীজ আলু রোপণ করা হয়েছিল ৬৫ হেক্টর। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নত জাতের প্রদর্শনী প্লট ছিল আরও ২ একর।
শিবপুরহাট প্রীতি কোল্ডস্টোরেজের আলু সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ী জামাল হোসেন বলেন, গত মৌসুমে প্রতি বস্তা (৬৫ কেজি) আলুতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ টাকা। এর মধ্যে কৃষকদের কাছ থেকে বস্তাপ্রতি ৯৫০ দরে কিনেছি। এরপর একটি পাটের বস্তা ৮০ টাকা, গাড়িভাড়া ও শ্রমিকের খরচ ৬০ টাকা এবং কোল্ডস্টোরেজের ভাড়া ২৮০ টাকা খরচ হয়েছে।
জামাল হোসেন আরও বলেন, এখন প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৮৫০-৯৫০ টাকা দরে। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারায় কিছু বস্তার আলুতে পচনও ধরেছে। এ বছর দুটি স্টোরেজে মোট দেড় হাজার বস্তা আলু কিনে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল। বর্তমান যে বাজার, তাতে ৭ লক্ষাধিক টাকা লোকসান গুনতে হবে।
উপজেলার আলুচাষি অধ্যাপক শাখাওয়াত হোসেন মুনশি বলেন, ‘বিগত বছর বাজারে আলুর দাম ভালো পেয়েছেন চাষিরা। তাই গত মৌসুমে এই এলাকায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলু রোপণ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। তবে লাভের আশায় উপজেলার চাষি ও ব্যবসায়ীরা তিনটি স্টোরেজে প্রায় আড়াই লাখ বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছেন। তবে এবার আলুর বাজার চরম মন্দা যাচ্ছে। এখন প্রতি বস্তায় ৩৫০ থেকে ৪৩০ টাকা পর্যন্ত লোকসান হচ্ছে। এতে করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীদের সাড়ে ৫ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হবে।
প্রীতি কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার সানাউল্লাহ বিশ্বাস বলেন, ‘এবার আলুর বাজার অনেক কম। তাই চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখনো স্টোর থেকে পুরোদমে আলু উত্তোলন শুরু করেননি। তবে কিছু ব্যবসায়ী ও চাষিরা বস্তায় প্যাকেট করার সময় ভালোভাবে আলু বাছাই করেননি। তাই কাটা-ফাটা আলুতে কিছুটা পচন দেখা দিয়েছে।’
ঝলমলিয়া বাজার এলাকার সালমা কোল্ডস্টোরেজের মালিক সেলিম হোসেন ডলার বলেন, ‘আমাদের এখানে দুটি স্টোরেজ আছে। দুটি স্টোরেজে এখনো দুই লক্ষাধিক বস্তা আলু সংরক্ষণ করা আছে। অনেক চাষি ও ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, হয়তো বাজার কিছুটা বাড়বে। তাই তাঁরা এখন আলু বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।’