কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক ডিলারের বিরুদ্ধে চালের ৪৩৬টি কার্ড আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে ডিলারের দাবি, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের নির্দেশে কার্ড জমা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চেয়ারম্যান এ কাজ করতে পারেন না। এটা অপরাধ। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
উপজেলার চরসাদিপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ডিলারের নাম আলাউদ্দিন শেখ। তিনি সাদিপুর গ্রামের মৃত মহসিন শেখের ছেলে। তাঁর ডিলার পয়েন্ট সাদিপুর বাজার এলাকায়।
খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা গেছে, চরসাদিপুর ইউনিয়নে দুই ডিলারের মাধ্যমে ৮৭৭টি কার্ড নবায়ন হয়েছে। তার মধ্যে ক্রমিক ১ থেকে ৪৪০ পর্যন্ত কার্ডে চাল বিক্রির ডিলার আব্দুর গাফফার। আর বাকি ৪৩৭টি কার্ডের ডিলার আলাউদ্দিন শেখ।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে ৩০০ টাকায় কার্ডপ্রতি ৩০ কেজি চাল বিক্রি করেন ডিলার। ১৬ ও ১৭ এপ্রিল সাদিপুর বাজারে চাল বিক্রি করেন ডিলার আলাউদ্দিন। প্রতিবার টাকা দিয়ে চালের সঙ্গে গ্রাহককে কার্ড ফেরত দেওয়া হতো। কিন্তু এবার সব কার্ড নিয়ে নেন তিনি। এখনো তা ফেরত দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে গোবিন্দপুর গ্রামের দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘১৬ এপ্রিল চাল আনতে গিয়েছিলাম। ৩০০ টাকা দিয়ে ৩০ কেজি চাল কিনেছি। প্রতিবার চালের সঙ্গে কার্ড ফেরত দিলেও এবার কেড়ে নিছে ডিলার। কবে ফেরত দেবে তা-ও কিছু বলেনি।’
একই গ্রামের মো. আরমান প্রামাণিকের ছেলে আছলাম প্রামাণিক বলেন, ‘গরিব মানুষ। সরকার কার্ড দিছিল। অল্প টাকায় চাল কিনে খেতাম। এবার কার্ড কাড়ে নিছে। আর হয়তো এ চাল খাওয়া হবে না।’
রুপালী খাতুন নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘কিছু কলো না, শুধু কার্ড রাখে দিল। আমি গরিব মানুষ। কার্ড কেন রেখে দিল? এই চাল না পাইলে আমার সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যাবে।’
সাদিপুর গ্রামের গৃহিণী জেসমিন বলেন, ‘মেম্বর-চেয়ারম্যানের কাছে ঘুরেঘুরে কার্ড করিছিলাম। তা-ও তো এবার কেড়ে নিল ডিলার। ফেরত দিল না। খুব কষ্ট লাগছে, কার্ডের জন্য।’
ডিলার আলাউদ্দিন শেখ বলেন, ‘আমার আন্ডারে ৪৩৭টি কার্ড আছে। ১৬ ও ১৭ এপ্রিল চাল বিক্রি করিছি। কিন্তু এবার চালের সঙ্গে কার্ড ফেরত দেওয়া হয়নি। ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে কার্ড রেখে দিয়েছি। পরে ফেরত দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন বড় কাপড়ের ব্যবসায়ী। এসব ছোট-খাট চালের ব্যবসা করার ইচ্ছা নেই।’
চরসাদিপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. মেসের আলী বলেন, ‘কার্ড যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডিলারকে জমা নেওয়ার কথা বলেছিলাম। পরে ভুল বুঝতে পেরে ফেরত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আস্তে আস্তে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এতে আবার অপরাধ কি?’
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য গুদামের নিয়ন্ত্রক মো. এরশাদ আলী বলেন, ‘জানতে পেরেছি, চেয়ারম্যানের নির্দেশে ডিলার কার্ড নিয়েছেন। ফেরতও দিচ্ছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান এ কাজ করতে পারেন না। এটা অপরাধ। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডলের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি।