শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মিরাসার চাষি বাজারে মধ্য স্বত্বভোগী ছাড়াই উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারছেন কৃষক। এই বাজারে চাষিরা ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। সবজি বিক্রি করতে চাষিদের কোনো টোল দিতে হয় না। পাইকাররাও খুশি সবজি ক্রয় করে। প্রতিদিন গড়ে আড়াই কোটি টাকার সবজি বিক্রি হয় এই বাজারে।
২০০৮ সালে জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের পাশে মিরাসার চাষি বাজার স্থাপিত হয়। প্রাথমিকভাবে ১২৫ কৃষক সমিতি করে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রয়ের জন্য এই বাজার চালু করেন। বর্তমানে স্থানীয় কৃষকেরা বাজারে কৃষি ফসল বিক্রি করতে পারেন। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে এই বাজার। এই বাজারে বর্তমানে ১২০টি দোকান রয়েছে।
গত শনিবার দুপুরে বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, মাদারীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত পাইকারি ব্যবসায় কৃষি পণ্য কিনে ট্রাকে তুলতে ব্যস্ত। অনেকেই আবার বাজার ঘুরে সবজি কিনতে ব্যস্ত। বাজারে শীতের সবজির আধিক্য বেশি। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কালোজিরা, ধনিয়াসহ বিভিন্ন সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তবে এবার সবজির দাম বেশ চড়া। প্রতি কেজি ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০, করলা ৪২, বেগুন ২৮ থেকে ৩০, বাঁধাকপি ১৮ থেকে ২০, লাউ আকার ভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
মাদারীপুরের শিবচর থেকে আসা সবজি ব্যবসায়ী জহিরুল আকন বলেন, ‘জাজিরার চাষি বাজার থেকে সব ধরনের সবজি কেনা যায়। এই অঞ্চলের মধ্যে তুলনামূলক কম দামে ভালো সবজি কিনতে এখানে এসেছি। সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকার সবজি কিনেছি।’
জাজিরার কাজিরহাট এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ বছরের বন্যা ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। তবে সবজির দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছি। এই বাজারে কৃষি পণ্য বিক্রি করতে কোনো টোল দিতে হয় না। সরাসরি আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারি।’
মিরাসার চাষি বাজারের সভাপতি আব্দুল জলিল মাদবর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মিরাসা চাষি বাজার সমবায় সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কৃষি পণ্য বিক্রি করতে সমিতির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হয়। এখানে পণ্য বিক্রি করতে কৃষককে কোনো টোল দিতে হয় না। দূর দুরন্ত থেকে আসা পাইকারদের কাছে এখন এই বাজারটি বেশ জনপ্রিয়। বাজারটিতে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার কৃষি পণ্য বিক্রি হয়। বাজারটি সম্প্রসারণসহ বাজারে ভেতরে যাতায়াতের জন্য পাকা সড়ক নির্মাণ জরুরি।’
জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার বলেন, ‘এই বাজার স্থানীয় কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করেছে। বাজারে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে আধুনিক বাজার হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’