নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে গ্যাসপাইপ ফেটে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নারায়ণগঞ্জের তিনটি উপজেলায় তীব্র গ্যাস-সংকট দেখা দিয়েছে। এতে আবাসিক গ্রাহকদের ভোগান্তির পাশাপাশি শিল্পকারখানায়ও এর প্রভাব পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়া। বাধ্য হয়ে অনেকেই মাটির চুলা কিংবা সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে বিকল্প উপায়ে রান্নার কাজ সারছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জে সহস্রাধিক আবাসিক এবং কারখানার গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। ১৮ জুন থেকেই তিনটি উপজেলায় তিতাস গ্যাসের গ্রাহকদের সংযোগে গ্যাসের চাপ কমে আসে। কোনো কোনো গ্রাহক দীর্ঘ সময় নিয়ে রান্নার কাজ করতে পারলেও অনেকে চুলাই জ্বালাতে পারছেন না। দোকান থেকে বাড়তি টাকা দিয়ে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে অনেককে। এ ছাড়া কারখানার গ্যাস-সংকট থাকায় উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হয় বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার তিতাস গ্যাসের প্রায় ৭ হাজার বৈধ আবাসিক গ্যাসের সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এ উপজেলায় এনজেড টেক্সটাইল, অনুপম হোসিয়ারি, রবিনটেক্সসহ ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় এক হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে শতাধিক কারখানায় পণ্য উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার হয়ে থাকে।
রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার বাসিন্দা রিয়াজ বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে গ্যাসের চাপ খুবই কম। আমাদের আগে থেকেই তৈরি করে রাখা মাটির চুলায় রান্নার কাজগুলো সেরে নিচ্ছি। তবে লাকড়ি সংগ্রহ, আগুনের ধোঁয়া ও তেল-কালির কারণে ভোগান্তি বেড়েছে গৃহিণীদের। যেসব নারী কারখানায় কাজ করেন, তাঁদের জন্য ভোগান্তি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এমন অবস্থায় খাবার বাইরে থেকে কেনা হচ্ছে। লোকমুখে শুনতে পাচ্ছি, আদমজীতে আগুন লাগার কারণেই এই সংকট। কত দিন এমন চলবে জানি না।’
সোনারগাঁ পৌর এলাকার বাসিন্দা ইমরান বলেন, ‘গ্যাসের চাপ কম। তবে অনেক সময় ধরে রান্না করা যায়। আগে যেই রান্না শেষ হতে ৩০ মিনিট লাগত, এখন সেটা এক-দেড় ঘণ্টা লাগছে। আমাদের এলাকায় বৈধ সংযোগের চেয়ে অবৈধ সংযোগ বেশি থাকায় এই সমস্যা বেশি। অবৈধগুলো না থাকলে এখন ততটা গ্যাসের চাপ কমত না।
আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমার এলাকায় আবাসিক গ্যাসের সংযোগ কম। কারখানার সংযোগ বেশি। কারখানার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় জানতে পারছি, তাঁরা ঠিকভাবে কারখানা চালাতে পারছেন না। এ ছাড়া বিভিন্ন গ্যাসপাম্পে গ্যাসের চাপও কম। আদমজীতে আগুন লাগায় এখন এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। আশা করছি তিন-চার দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।’
গ্যাসের চাপ কম থাকার বিষয়ে তিতাস গ্যাস সোনারগাঁ আঞ্চলিক বিপণন অফিসের প্রকৌশলী মিজবাহ-উর রহমান বলেন, ‘গত শুক্রবার আদমজী ইপিজেডে গ্যাসের পাইপ ফেটে অগ্নিকাণ্ডের কারণেই আপাতত চাপ কিছুটা কম। সেই দুর্ঘটনাস্থলে পাইপ মেরামতের কাজ চলছে। দুর্ঘটনাস্থলে ২৪০ টন ওজনের পাইলিং মেশিন ৪০ ফুট নিচে নেমে গেছে। এসব কারণে কিছুটা সময় বেশি লাগছে। আমরা প্রত্যাশা করছি আগামী দু-এক দিনের মধ্যে গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হবে।’