ঝালকাঠিতে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত এক মাসে জেলার সদর হাসপাতালসহ চার উপজেলায় এক হাজারের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঋতু পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকেরা। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
গত সাত দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক রোগী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও এক শর বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। হঠাৎ রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ঋতু পরিবর্তন ও হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় বয়স্ক ও শিশুরা বেশি ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান চিকিৎসকেরা।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের তথ্যমতে, গত ১ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ডায়ারিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪০৯ জন রোগী। এখন প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী গোলেনুর বেগম জানান, গত দুদিন ধরে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি। শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। স্যালাইন দেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ বোধ করছি।
সামিয়া নামে এক শিশুকে চিকিৎসা দিতে নিয়ে আসা তার মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘রাত থেকে বাচ্চার পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে নিয়ে এসেছি। এখন কিছুটা ভালোর দিকে আমার মেয়ে।’
সোবাহান নামে এক ডায়রিয়া রোগী জানান, প্রথমে পেট ফাঁপা দেখা দিয়েছিল তাঁর। এরপর পায়খানা শুরু হয়। খাবারে সমস্যার কারণে তিনি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন সাত-আটজন চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত এক মাসে তিন শতাধিক ব্যক্তি ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইমরান জানান, গরমে ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোজ প্রায় শিশুসহ সাত-আটজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত এক মাসে প্রায় ২০০ ব্যক্তি ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে রোগীদের।
কাঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার তালুকদার জানান, প্রতিবছর এ সময় গরমের কারণে ডায়রিয়ার রোগী বাড়ে। এখন রোজ শিশুসহ প্রায় তিন-চার জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত এক মাসে শতাধিক মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আবুয়াল হাসান বলেন, ‘অতিরিক্ত তাপের কারণে অনেকেই এ সময় পানিশূন্যতাসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গরমের কারণে ডায়রিয়া ছাড়াও নবজাতক শিশুসহ বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন গরম ও ঠান্ডাজনিত রোগে। ফলে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। গরমের সময় বিশেষ কয়েকটি রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু কিছুটা সতর্ক হলেই এসব রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।’