নিরামিষ রান্নার নানা রকম সবজি বা আম, চালতা, আমড়া, বরই, তেঁতুলসহ হরেক রকম আচারের সঙ্গে পাঁচফোড়নের মিতালি সেই আদ্যিকালের। পাঁচফোড়ন ব্যবহারের কারণে সবজি বা আচারের স্বাদ-ঘ্রাণে জিভে এসে যায় জল। শুনেই বোঝা যায় পাঁচফোড়ন মানে পাঁচ ধরনের মসলার গলাগলি। মসলা পাঁচটি হলো মৌরি, মেথি, জিরা, কালিজিরা ও কালো সরিষা। এর বাইরে বা এগুলোর কোনো একটির বদলে কখনো কখনো ধনে, রাঁধুনি, জৈন বা জোয়ানও ব্যবহার করা হয়।
সাধারণত এই পঞ্চ মসলা বা বীজ রান্নার শুরুতে গরম তেল বা ঘিয়ে ছেড়ে দিলে চমৎকার একটি সুঘ্রাণ তৈরি হয়। নিরামিষ সবজি কিংবা আচার বাদেও নানা পদের ডাল রান্নায় সাধারণভাবে পাঁচফোড়ন ব্যবহার করা হয়। তবে ডালভেদে আলাদা আলাদা করেও ব্যবহার করা যায় এই পাঁচফোড়নের মসলাগুলো। নিরামিষ বা সবজি রান্নার শেষে পাঁচফোড়নের গুঁড়ো দিলে ঘ্রাণ এবং স্বাদ দুটোই বেড়ে যায়।
পাঁচফোড়নের প্রতিটি উপাদানের আলাদা আলাদা গুণ ও স্বাদ রয়েছে। তবে এর সম্মিলিত স্বাদটিও অনন্য। পাঁচফোড়নে পুষ্টি তো আছেই এর ঔষধিগুণও কম নয়। এতে আছে খনিজ লবণ। সেই সঙ্গে আছে ভিটামিন এ, বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৬, বি-৯, কে, ই এবং সির মতো উপাদান। এই উপাদানগুলোর কোনোটি হয়তো অ্যাজমায় উপকারী তো কোনোটি আর্থ্রাইটিসে উপকার করে, কোনোটি নেয় ত্বকের যত্ন, কোনোটি আবার ওজন কমাতে, বার্ধক্য প্রতিরোধে, চুল পড়া বন্ধ ও চুল বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। এমনকি পেট ঠান্ডা রাখতেও ভূমিকা রাখে এদের কোনো কোনোটি। পাঁচফোড়ন বাংলাদেশ বা ভারত ছাড়াও নেপালে খাবার রান্নায় ব্যবহার হয়ে থাকে।
পাঁচফোড়ন বাজারে কিনতে পাওয়া গেলেও আলাদা আলাদা বীজ কিনে এনেও বাড়িতেই বানিয়ে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি উপাদান সমপরিমাণে মিশিয়ে নিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে, দীর্ঘদিন একই কৌটোয় রাখলে এগুলো এক রকম সাদা ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হতে পারে। এতে ফোড়নের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় এবং খাওয়ার উপযোগী থাকে না। দীর্ঘদিন রাখতে হলে কিছুদিন পরপর পাঁচফোড়ন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।