বাবা জয়নাল আবেদীনের পেশা ছিল বিষধর সাপ ধরা এবং খেলা দেখিয়ে ওষুধ বিক্রি করা। সেই সাপের দংশনেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবু সাপের পিছু ছাড়েননি ছেলে মোক্তার হোসেন। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে সাপ ধরা আর খেলা দেখিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
রংপুর শহরের হনুমানতলা এলাকার বাসিন্দা সাপুড়ে মোক্তারকে সম্প্রতি পাওয়া গেল মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে। মডেল মসজিদের পাশে সাপের খেলা দেখাচ্ছিলেন তিনি। সাপুড়েদের ভাষায়, এই খেলা দেখানোর আসরকে বলা হয় মজমা। মজমা শেষে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মোক্তার জানান, তিনি বাবা জয়নালের কাছেই সাপ ধরা ও খেলা দেখানোর কলাকৌশল শেখেন। এ ছাড়া লাল চান নামের এক ওস্তাদের কাছে তালিম নিয়েছেন। আসলে সাপ ধরার কোনো মন্ত্র নেই। সাহস ও কলাকৌশল জানা থাকলেই প্রাণীটি ধরা যায়।
সংসার চালাতে মজমার ওপর নির্ভরশীল মোক্তার জানান, আগের মতো আর আয়-রোজগার হয় না। তিনজন মিলে অংশ নেওয়া প্রতিটি মজমায় ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পাওয়া যায়।
মজমার পাশে একটি টুলে বসে ছিলেন কালো রঙের পোশাক পরা ওস্তাদ লাল চান। তাঁর বয়স ৯২ বছর। আলাপচারিতায় জানান, লেখাপড়া না করায় মার খেয়ে ১১-১২ বছরে ঘর ছাড়েন তিনি। বেদের দলে যোগ দিয়ে ১৫ বছর বাইরে থাকেন, ভারতেও গিয়েছিলেন। তখনই সাপ ধরা ও খেলা দেখার কৌশল শিখেছেন। দেশ স্বাধীনের পর ময়মনসিংহ থেকে রংপুরে আসেন এবং এখানেই আছেন। এখন শিষ্য মোক্তারের সঙ্গে থাকেন।
মোক্তারের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁরা কেউ বাবার পেশায় আসেননি। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কিছুদিন আগে। এক ছেলে বাসের চালক। সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও সুখের ঘাটতি নেই বলে জানান তিনি।