Ajker Patrika
হোম > ছাপা সংস্করণ

হাসনাবাদের পেইরার বাড়ি

মোহাম্মদ এমদাদুল হক

হাসনাবাদের পেইরার বাড়ি

দাউদকান্দি উপজেলার সদর (উত্তর) ইউনিয়নের হাসনাবাদ ও এর আশপাশের কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে হিন্দু জমিদারি আমলের স্থাপনা। এর মধ্যে একটি জমিদার প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এ এলাকার বাসিন্দাদের কাছে সমাদৃত। প্রাসাদটি বর্তমানে পেইরার বাড়ি নামে পরিচিত।

পেইরার বাড়ি অবস্থিত হাসনাবাদের ভিটিকান্দি গ্রামে। নির্মাণ করা হয়েছিল আনুমানিক সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। পেরি মোহন ভৌমিক নামের একজন জমিদার এটি নির্মাণ করেছেন বলে জানা যায়।

বাড়িটির সামনে রয়েছে সুবিশাল একটি পুকুর। পুকুরের ঘাট বাঁধানো। পানযোগ্য পানির ব্যবস্থায় বাড়িটিতে খনন করা হয়েছিল গভীর একটি কুপ। ভবনটি লম্বায় প্রায় ৫০ ফুট এবং প্রস্থে ২৫ ফুট। দেয়ালে সুসজ্জিত কারুকাজ, দেব-দেবী, তিন মাথা বিশিষ্ট সাপ, বাঘ ও সিংহের নকশা খচিত পলেস্তারা বাড়িটিকে করেছে আকর্ষণীয়।

মূল ভবন, পুকুর, উঠানসহ সুবিশাল জমি নিয়ে নির্মিত হয়েছিল জমিদার বাড়িটি। পুকুরে বিশাল আকৃতির একটি সোনালি মাছ এবং চারটি বড় বড় কাশের ডেকসি পূজার সময় ভেসে উঠত বলে লোকমুখে শোনা যায়। যদিও এর ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।

কালের বিবর্তনে আজ বাড়িটির সিংহ ভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে। বাড়িটির উত্তর পাশে আরও একটি প্রাসাদ ছিল। এ প্রাসাদে বাস করতেন পেরি মোহন ভৌমিকের ভাই অসৈর্য কুমার ভৌমিক। এই বাড়িটির আশপাশে আরও কিছু ছোট ছোট প্রাসাদ ছিল।

পুকুরের দক্ষিণ পাশে বাস করতেন নেপাল চৌকিদার। সেগুলো এখন আর নেই। স্থানীয় অনেকের ধারণা, বাড়িটির আশপাশে গুপ্তধন বা আরও স্থাপনা থাকতে পারে। এর কিছু দূরে তাঁদের উপাসনার জন্য নির্মিত একটি মঠ এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটি পূর্ব হাসনাবাদে অবস্থিত। স্নান করার জন্য মঠের গা ঘেঁষেই খনন করা হয়েছে বিশাল এক পুকুর।

মঠের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে বড় মই দিয়ে উঠতে হতো। এর নিচের অংশের ১২ থেকে ১৫ ফুট মাটির নিচে চলে গেছে।

এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ায় প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে জমিদারের উদ্যোগে মঠের নিচে দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্বাংশের সর্বাগ্রে আয়োজন করা হতো নান্দনিক বৈশাখী মেলা। আশপাশের এলাকাসহ গঙ্গ প্রসাদ, দুধঘাটা, দড়িগাঁও, মোহনপুর, ভাজরা, বালুয়াকান্দি, হাসনাবাদ উত্তর, জগৎপুর ও অন্যান্য এলাকা থেকে হাজারো মানুষের ঢল নামতো এই মেলায়। এই মেলা বর্তমানে ভিটিকান্দি বাজার মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। দেশ বিভাগের পর যখন হিন্দুরা পার্শ্ববর্তী দেশসহ অন্যত্র পুনর্বাসিত হতে থাকেন তখন ধীরে ধীরে প্রাসাদগুলো পরিত্যাক্ত হয়।

পেইরার বাড়ির পুকুরের উত্তর-পূর্ব কর্নারে বড় বড় চিতাশাল ছিল। চিতাশালের সামান্য উত্তরে কর্মকারদের জনবসতি ছিল। তাঁরা মনোসা পূজারি ছিলেন। প্রতি বছর এলাকাবাসী তাঁদের পূজা উপভোগ করতেন। এলাকাটি কামারপাড়া (পূর্ব হাসনাবাদ) নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

এ ছাড়া এখান থেকে অল্প দূরে ভাজরা ও মজিদপুর এবং হাসনাবাদ উত্তরপাড়ার বাজারে তৎকালীন সময়ের কয়েকটি স্থাপনা এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

ঐতিহাসিক স্থাপনার কাছে গিয়ে এক মুহূর্তের জন্য যে কেউ এক শ কিংবা দুই শ বছর আগের হাসনাবাদ কল্পনা করতে পারেন।

সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে এসব ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হতে চলেছে। হয়তো আর কয়েক যুগ পরে কোনো চিহ্ন থাকবে না। তাই শিগগির এসব স্থানপনাগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণ করার দাবি জানাই।

লেখক: সহকারী রেজিস্ট্রার, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ