বোরো মৌসুমের শুরুতেই সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সেচসংকট দেখা দিয়েছে। খালবিল ও জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। কোথাও কোথাও জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ফলন ভালো হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তাঁদের।
এদিকে পাঁচ-ছয় বছর ধরে ঢলের সঙ্গে পলি আসায় নদী, হাওর ও খালবিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নদীতে পানির ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে। আর এসব জলাশয়ে পানি না থাকায় জমিতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষকেরা।
সুনামগঞ্জ কৃষি কার্যালয়ের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ৪২টি হাওরে চলতি বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে।
জামালগঞ্জ উপজেলার সেলমস্তপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বাতেন বলেন, ‘হাওরেও পানি কম। এর মধ্যে ছোট খালেও পানি নেই। উঁচু জমিগুলোতে চাষাবাদ করতে পানির অভাব দেখা দিয়েছে।’
জানা যায়, চলতি বছর বোরো আবাদের শুরুতেই পানিসংকট দেখা দিয়েছে জেলার হাওর এলাকায়। এর মধ্যে কিছু জমিতে পানির অভাবে চারা লালচে রং ধারণ করেছে। সময়মতো সেচ দিতে না পারলে ফলন ভালো হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
কৃষকেরা জানান, চারা রোপণের পর জমির আশপাশে পানি না থাকায় জমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই অনেক জমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে ধানের চারা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। এদিকে খরচার হাওরে পানির অভাবে ধানের চারা লাল হয়ে মরে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে।
অভিযোগ করে কৃষকেরা বলছেন, হাওর এলাকার খাল ভরাট হয়ে যাওয়া পানিসংকটের মূল কারণ। শ্যালো মেশিন কিংবা হাত দিয়ে সেচের পানি দেওয়া হচ্ছে।
একই উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের মসলঘাট গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছরই বোরো চাষের শুরুতে হাওরে পানি শুকিয়া যায়। তখন আমাদের চাষাবাদ করতে খুব কষ্ট হয়।’
একদিকে খালবিলে পানি কম, অন্যদিকে দূরদূরান্ত থেকে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি দিতে হচ্ছে জমিতে। এবার ডিজেলেরও দামও বেড়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকেরা দুর্ভোগে রয়েছেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ফতেপুর গ্রামের কৃষক নারায়ণ দাস বলেন, ‘আমার জমি হাওরের উঁচু স্থানে। সব সময় শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে হয়। এখন হাওরে পানি নেই। নদী থেকে শ্যালো মেশিনে পানি দিচ্ছি। এদিকে ডিজেলের দাম বাড়ায় খরচও অনেক বেশি হচ্ছে।’
স্থানীয়দের দাবি, শ্যালো মেশিন দিয়ে বড় বড় জমিতে পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকারিভাবে সেচব্যবস্থার দাবি জানান তাঁরা।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ভাটি শাফেলা গ্রামের কৃষক কবির হোসেন বলেন, ‘সামর্থ্যবান কৃষকেরা শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিতে পারছেন। কিন্তু আমরা যাঁরা প্রান্তিক কৃষক, শ্যালো মেশিন দিয়ে তাদের পানি দেওয়া কষ্টকর।’
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সেচ প্রকল্পের সুনামগঞ্জের সহকারী প্রকৌশলী হুসাইন মুহাম্মদ খালেদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাওর এলাকার সেচ প্রকল্পের জন্য বেশ কিছু খাল খননের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদিত হলে সেচসংকট দূর হয়ে যাবে।’