আজকের পত্রিকা ডেস্ক
ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি জেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেড়েছে বন্যার্তদের দুর্ভোগ। পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলে নদীভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় লোকজন জিও ব্যাগ ফেলাসহ বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েও ভাঙন ঠেকাতে পারছে না।
চৌহালীতে তীব্র হয়েছে নদীভাঙন
সিরাজগঞ্জে চৌহালীর ভূতের মোড় থেকে চর ছলিমাবাদ দক্ষিণপাড়া কবরস্থান পর্যন্ত যমুনা নদীর পাড় ভাঙছে। গত শনিবার থেকে চার দিনে এখানকার কবরস্থানের এক-তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীতে ভাসছে লাশ। জেলার ৩৪টি ইউনিয়নের ১৮ হাজার পরিবারের প্রায় এক লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী।
সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার বলেন, যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো বিপৎসীমার ওপরেই রয়েছে। আগামী কয়েক দিন পানি কমবে। যেসব জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে, তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চৌহালীর ইউএনও মাহবুব হাসান বলেন, যমুনার পানি বৃদ্ধির কারণে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
কুড়িগ্রামে ধীরে নামছে পানি
কুড়িগ্রামেও নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। তবে কমেছে ধরলার পানি। জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার ৫৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী। প্লাবিত হওয়ায় ৩৯৭টি বিদ্যালয়ে পাঠদান ও মূল্যায়ন পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
গাইবান্ধায় পরিস্থিতির উন্নতি
গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামছে ধীরে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়ার পানি কমলেও ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা বাদে অন্য নদ-নদের পানি অনেক কমেছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গাইবান্ধায় ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ। দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যের সংকট। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা, হরিপুর কঞ্চিবাড়ী ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে সুন্দরগঞ্জে গতকাল বানের জলে পড়ে মো. কাওছার আহমেদ নামের দুই বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের তালুক বেলকা গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। কাওসার আহমেদ ওই গ্রামের মো. আলী হোসেনের ছেলে।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক নাহিদ রসুল বলেন, জেলার ৪টি উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৩৯ হাজার পরিবার পানিবন্দী। ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
মৌলভীবাজারে বন্ধ ১৭৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
প্রায় এক মাস ধরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার মানুষ পানিবন্দী। দিনে দিনে বাড়ছে দুর্ভোগ। ছড়িয়ে পড়ছে নানা রোগব্যাধি। বিশেষ করে জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া ও চর্মরোগ এখন প্রায় প্রতিটা পরিবারে। এ ছাড়া গবাদিপশুর খাদ্যসংকটও দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে ১৭৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
তবে বন্যার প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি]