উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে আঁতাত করে সংশ্লিষ্ট কাজ শেষ না করে জামানতের টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানাকে শোকজ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষ।
লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খাঁন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গত সোমবার প্রকৌশলী সোহেল রানাকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তিনটি বিদ্যালয়ের কাজ শুরু না করেও জামানতের টাকা কেন ফেরত দেওয়া হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।
কারণ দর্শানোর অনুলিপি প্রধান প্রকৌশলী এলজিইডির সদর দপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
শোকজের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু না করে এবং কাজের সময়সীমা অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কাজের জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিম্নস্বাক্ষরকারী অবহিত হয়েছেন।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এমন কর্মকাণ্ড ঠিকাদারি চুক্তির সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং আপনার (উপজেলা প্রকৌশলী) অদক্ষতা প্রমাণ করে। বিদ্যালয় তিনটির কাজ কেন শুরু না করে জামানত ফেরত দেওয়া হয়েছে, এর সুস্পষ্ট জবাব তিন দিনের মধ্যে দিতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের পিইডিপি-ফোরের আওতায় উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ছাবেরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চন্দনপাঠ বুড়িরদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুরাকুটি কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আগে লটারিতে ওই ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ পায় রংপুরের মিলন কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বরাদ্দ অনুযায়ী ছাবেরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চুক্তিমূল্য ৫৮ লাখ ৮২৩ টাকা, চন্দনপাঠ বুড়িরদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চুক্তিমূল্য ৬৭ লাখ ৬২ হাজার ৪৮৯ টাকা ও দুরাকুটি কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৬ টাকা। এসব কাজের জন্য ঠিকাদারকে শতকরা ২৫ টাকা হারে প্রকৌশল অধিদপ্তরে জামানত রাখতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী চূড়ান্ত কাজ শেষে ভবন হস্তান্তর করে এসব টাকা উত্তোলন করতে পারেন ঠিকাদার। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে এ ৩টি বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরুর আগেই।
কাজ শুরুর আগেই মিলন কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানাকে ম্যানেজ করে তিনটি বিদ্যালয়ের জামানত ৪৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ৩টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণকাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খাঁন উপজেলা প্রকৌশলীকে শোকজের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তিন দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলীর অনুমতি ছাড়া জামানতের টাকা উত্তোলন করা কখনো সম্ভব নয় বলে দাবি করেন মিলন কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মিলন আহমেদ।
আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা তিনটি বিদ্যালয়ের জামানতের টাকা উত্তোলন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার তাঁর আইডির পাসওয়ার্ড হ্যাক করে জামানতের টাকা উত্তোলন করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।