খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় বর্ষা মৌসুমেও অনাবৃষ্টি। ফলে পাহাড়ের প্রান্তিক কৃষকের আয়ের উৎস ছড়াকচু বা মুখিকচু চাষ ব্যাহত হচ্ছে। পাহাড়ে কেউ বলে ছড়াকচু, কেউ বলে মুখিকচু। এই কচুর বীজ রোপণের পর থেকে এ বছর প্রয়োজনীয় বৃষ্টি না হওয়ায় অপরিপক্ব অবস্থায় গাছ মরে যাচ্ছে। ফলে কচুচাষিরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে কচু তোলা শুরু করেছেন। এতেও স্বস্তি নেই। কচুর আকার ছোট, খেতে ফলন কম, বাজারদর নিম্নমুখী। ফলে লোকসান প্রতি একরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা! প্রতিনিয়ত কচু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ে উপজেলার উঁচু-নিচু টিলায় ছড়া কচু চাষে প্রান্তিক কৃষকের প্রতিযোগিতা ছিল। কচু চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার নজিরও অনেক। কিন্তু গত দু-তিন বছর আষাঢ়-শ্রাবণের ভরা মৌসুমেও আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে কচু চাষে টিলা কুপিয়ে মাটি উর্বর করে লাগানো হয়। আর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পরিপক্ব কচু তোলা হয়। গত বছর উপজেলায় মুখিকচু চাষ হয়েছিল ৭৮ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে তা নেমে এসেছে ৫০ হেক্টরে। খেতের কচু পরিপক্ব হতে এখনো প্রায় তিন মাস বাকি। কিন্তু গ্রীষ্ম-বর্ষাকালেও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিও হয়নি। ফলে টিলায় লাগানো মুখিকচু খেত মরে মাটিতে ফাটল ধরেছে।
গতকাল শুক্রবার উপজেলার নাথপাড়া, লেমুয়া, মলঙ্গীপাড়া ও রাঙ্গাপানি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টিলার পরতে পরতে লাগানো কচুখেত মরে সাবাড়! ফলে চাষিরা নিরুপায় হয়ে দলে দলে শ্রমিক দিয়ে অপরিপক্ব কচু ওঠাচ্ছেন।
কচুর জমিতে নিয়োজিত শ্রমিক বায়েজিত মোল্লা বলেন, এ বছর খরায় কচু চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এক কানি জমি বর্গায় চাষ করলে মোট ব্যয় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। অতি খরায় এবার গড় উৎপাদন ৫৫ থেক ৬০ মণ। বর্তমানে বাজারদর প্রতি মণ ৮০০-৯০০ টাকা। তাহলে প্রতি কানিতে লোকসান ১০ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিনুর রহমান বলেন, প্রকৃতি তার গতি পাল্টিয়েছে। অতি খরায় এ বছর প্রান্তিক কৃষক চাষাবাদে চরম বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে।