রাজশাহীতে নারী ও শিশু নির্যাতন থামছেই না। এসব ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিয়ে বাদীপক্ষের পরিবার উল্টো বিপাকে পড়েছে। মামলা তুলে নিতে আসামিপক্ষ নানা হুমকি দিচ্ছে। অনেকে ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়। এতে বলা হয়, ভুক্তভোগী পরিবারের সংখ্যা অনেক।
স্বামীর অ্যাসিড হামলার শিকার হন রাজশাহীর গোদাগাড়ীর একটি গ্রামের এক তরুণী (১৯)। তাঁর মা বলেন, ‘আমার মেয়ে গত বছরের ২ অক্টোবর জামাতার অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়। এখনো সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেনি। আমরা টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারছি না। এরই মধ্যে মামলা চালাতে গেলেও প্রতিদিন আদালতের বারান্দায় টাকা খরচ হচ্ছে। আবার মামলার আসামিরা কোর্টে এসে প্রকাশ্যেই আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে আমরা ঠিকমতো বাড়িতেও থাকতে পারছি না। তাহলে আমরা এখন কোথায় যাব?’
গত ২১ জুলাই বাড়ির পাশে আমগাছে ঝুলছিল গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এলাকার গৃহবধূ ফাতেমা খাতুনের লাশ। তাঁর সারা শরীর কাদামাখা ছিল। কিন্তু পায়ের তালুতে কোনো কাদা ছিল না। ফাতেমার শিশুসন্তান সাক্ষী দিয়েছিল, তার মাকে হত্যা করে লাশ আমগাছে ঝুলিয়ে রাখে তার বাবা, দাদা ও চাচা। কিন্তু এ ঘটনার পর থানা-পুলিশ মামলা গ্রহণ করে আত্মহত্যা প্ররোচনার ঘটনায়। এ মামলার অন্যতম আসামি ফাতেমার স্বামী মোতালেব এখনো জেলহাজতে। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা এখন মামলা তুলে নিতে মা-বোনদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে।
ফাতেমার বোন সুলনেহার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা যেন এ নিয়ে মুখ না খুলি, তার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা ওই ঘটনায় হত্যা মামলা করতে চাই। আমার বোনের হত্যাকারীর বিচার চাই। কিন্তু যেভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তাতে এখন বাড়িতেই টেকা দায় হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে পুঠিয়া উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীর এক নারীকে ধর্ষণের পর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় যুবলীগ নেতা সুমনুজ্জামান সুমনের পরিবার থেকে ওই নারীকে অব্যাহত হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে।
একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাশেদ ইবনে ওবায়েদ বলেন, ‘মেয়েটি এখন খুব অসহায় হয়ে আছে। এমনকি তাঁর বাড়িতেও আশ্রয় হারিয়েছে। এখন মেয়েটি যাবে কোথায়?’ এ ছাড়া নগরীর লক্ষ্মীপুরে সম্প্রতি সাত বছরের এক শিশু নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরে রাশেদ ইবনে ওবায়েদ বলেন, ‘এ ঘটনার আসামি একজন যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার সরকারি কর্মকর্তা। এখন তার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলাটি তুলে নিতে একের পর এক হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে চরম বিপাকে আছেন শিশুটির পরিবারের সদস্যরা।’
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বেসরকারি চারটি সংস্থা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (রিইব) নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডাসকো ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আকরামুল হক ও নেটজ বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আফসানা বিনতে আমিন।