শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৫০ শয্যার সরকারি হাসপাতালে নানা সমস্যা। এখানে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি নেই। কিছু যন্ত্রপাতি অকেজো বা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। লোকবল সংকট রয়েছে। লোক না থাকায় ১৮ বছর ধরে পড়ে আছে এক্স-রে মেশিন। নেই পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স। এ সব কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যা অনুযায়ী চিকিৎসক থাকার কথা ৯ জন। কিন্তু হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও চিকিৎসক রয়েছে ৪ জন। পরিপূর্ণ সেবা দিতে সেখানে চিকিৎসক প্রয়োজন ২০ জন, ল্যাব টেকনোলজিস্টের দুটি পদও ফাঁকা, এক্স-রে টেকনোলজিস্টের একটি পথ থাকলেও সেটি এখনো শূন্য, ইসিজি টেকনোলজিস্টের একটি পদও ফাঁকা, প্রধান হিসাব রক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে ৪ জনের জায়গায় ১ জন রয়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতালটির সার্বিক সেবার জন্য ২০ জন নার্স থাকার কথা, সেখানে রয়েছেন ৯ জন।
সরেজমিনে ঘুরে ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের আট লাখ টাকা মূল্যের এক্স-রে মেশিনটি ২০০২ সালে স্থাপন করা হয়। কিন্তু যন্ত্রটি পরিচালনার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে এই মূল্যবান যন্ত্রটি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এক্স-রে মেশিনের নির্দিষ্ট টেকনোলজিস্ট না থাকায় ১৮ বছরেও মেশিনটি তাঁরা চালু করতে পারেননি। তবে এ সুযোগে ভেদরগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। তাঁরা সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের ভাগিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রায় সাত বছর আগে স্থাপন করা চার লাখ টাকা মূল্যের আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনও পড়ে আছে অকেজো। এখন পর্যন্ত মেশিনটি চালানোর জন্য দেওয়া হয়নি লোকবল। ফলে হাসপাতালের আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিক থেকে অতিরিক্ত মূল্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করছেন রোগীরা। একই হাল ইসিজি, অ্যানেসথেসিয়া, মাইক্রোস্কোপ, অ্যানালাইজার, রেফ্রিজারেটর, জিন এক্সপার্ট মেশিনেরও। জনবল সংকটের কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না এসব গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি।
হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি রোমান বলেন, ‘এ হাসপাতালে কোনো ধরনের পরীক্ষাই আমরা করাতে পারি না। শুনি সব যন্ত্রপাতিই আছে। কিন্তু অপারেটর না থাকায় কাজ করানো যাচ্ছে না। এটা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।’
রোজিনা আক্তার নামের একজন এসেছিলেন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে। তবে চিকিৎসক তাঁকে দুটি পরীক্ষা লিখে দিয়ে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে মেশিন আছে কিন্তু লোক নেই। আপনি হাসপাতালের পাশে বেসরকারি ক্লিনিকে পরীক্ষা করিয়ে আনেন।’ পরে উপায় না পেয়ে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে বেসরকারি ক্লিনিকেই এক্স-রে করান তিনি। রোজিনা আক্তার বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমাদের চিকিৎসা ব্যয় সরকার যদি পুরোটাই বহন করত, আমাদের মতো দরিদ্রদের জন্য খুব উপকার হতো। সরকারি হাসপাতালের থেকে কয়েকগুণ বেশি টাকা নেয় ক্লিনিকের চিকিৎসকেরা।’
রুবেল মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালে পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় বেসরকারি ক্লিনিকে অধিক টাকা দিয়ে আমাদের পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ। সরকারিভাবে পরীক্ষা করাতে পারলে উপকার হতো।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসান ইবনে আমিন বলেন, ‘হাসপাতালটি ৫০ শয্যার। কিন্তু ৩১ শয্যার লোকবল দিয়েই আমরা জনগণের সেবা করে যাচ্ছি। আমাদের যদি এক্স-রে ইসিজির টেকনোলজিস্ট থাকত তাহলে রোগীদের কষ্ট করে অধিক টাকা দিয়ে বাইরে পরীক্ষা করাতে হতো না।’