আগের মন্ত্রিসভার তুলনায় নতুন মন্ত্রিসভায় সংখ্যা কিংবা হারে ব্যবসায়ী কমেছে। তবে তাঁরা এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ। ৩৬ জন মন্ত্রীর ১৩ জনেরই আয়ের উৎস ব্যবসা। শতাংশের হিসাবে এই মন্ত্রিসভার ৩৬ দশমিক ১১ শতাংশই ব্যবসায়ী। আগের মন্ত্রিসভার ৪৮ সদস্যের ২২ জন, অর্থাৎ ৪৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় ৫৭ জনের ২১ জন, অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ ব্যবসায়ী ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব জানা গেছে। হলফনামা অনুযায়ী, এবারের মন্ত্রিসভায় ১৩ জন ব্যবসায়ী ছাড়াও ৫ জন আইনজীবী ও ৪ জন চাকরিজীবীও। সাতজন হলফনামায় নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন রাজনীতিবিদ। কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনজন। এ ছাড়া দুজন শিক্ষক, একজন স্থপতি ও একজন চিকিৎসকও রয়েছেন নতুন মন্ত্রিসভায়।
বঙ্গভবনে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, নতুন মন্ত্রিসভার যে সদস্যরা তাঁদের পেশা হিসেবে ব্যবসাকে উল্লেখ করেছেন, তাঁরা হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম, ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান, রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
নির্বাচনব্যবস্থার গলদের কারণে এমনটা হচ্ছে জানিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, ‘পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, মন্ত্রিসভার করপোরেট ব্যবসায়ীরা আইন প্রণয়নের সময় নিজেদের ছাড়া সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখেন না। যাঁদের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না, যাঁরা রাজনীতিতে নিবেদিত নন, মানুষের প্রতি তাঁদের অঙ্গীকারও থাকে না। মূল গলদ আমাদের নির্বাচন পদ্ধতিতে। এঁরা তো তৃণমূল থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন না। ওপর থেকে নিযুক্ত হচ্ছেন। তাঁরা ঢাকা আর বিদেশে বসে ব্যবসা করেন। এরা জনপ্রতিনিধি না, এঁরা নিয়োজিত ব্যক্তি। জনস্বার্থবান্ধব কোনো নীতি প্রণয়নে এদের ভূমিকা দেখি না।’
মন্ত্রিসভার যে তিন সদস্য হলফনামায় নিজেদের পেশা কৃষিকাজ লিখেছেন তাঁরা হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আইন পেশার কথা উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
চাকরিজীবী হিসেবে হলফনামায় পেশা উল্লেখ করা চার মন্ত্রী হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং পানিসম্পদমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। শিক্ষকতা পেশার কথা উল্লেখ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী রুমানা আলী। এ ছাড়া নতুন মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হয়েছেন স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন।