রাজনীতিবিদেরা এখন অর্থনীতিবিদদের হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। আর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ক্ষমতার রাজনীতি কিছু প্রভাবশালীর রাতারাতি অন্যায়ভাবে অর্থ-বৈভব অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন ড. ফরাসউদ্দিন ও ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বইটি লিখেছেন ড. ফরাসউদ্দিন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য শামস্ রহমান। সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
ফরাসউদ্দিন বলেন, এখন রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে অসম সম্পর্ক বিদ্যমান। তাঁরা এখন অর্থনীতিবিদদের হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান। অর্থনীতিবিদেরা জ্ঞানী, গণমাধ্যমে বা টেলিভিশনে তাঁরা কথা বলেন। রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের উচিত, আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের কথা শোনা। সেটা করা গেলে খুব ভালো হতো। তিনি বলেন, তিনি মনে করেন, প্রচলিত পথে দারিদ্র্য বিমোচনের পরিবর্তে শিল্পায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদ সাংবিধানিক করার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, নিদেনপক্ষে গভর্নর পদে ছয় বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া সমীচীন।
ফরাসউদ্দিন বলেন, আড়াই থেকে তিন বছর ধরে সুদের হার ৯-৬ এবং বহুপক্ষীয় মুদ্রা বিনিময় হার থাকার কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লাগবে। ঋণখেলাপি ও মুদ্রা পাচারকারীরা একই সূত্রে গাঁথা। এসব সমস্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে পারলে তিনি সেগুলো দূর করার পদক্ষেপ নেবেন বলে মনে করেন তিনি।
ড. মসিউর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের অটোনমির বিষয়ে কারও দ্বিমত করার কথা নয়। এখনো সেটা রয়েছে।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক কারণে অর্থনীতির বিচ্যুতি হয়। নীতিমালার যে ধরনের বিশ্লেষণ দরকার এবং বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা দরকার, সেটা সরকারের অনেক সময় থাকে না। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আনুষ্ঠানিকতার ভেতরে এক দলের প্রাধান্যে কর্তৃত্ববাদী সরকার। এ ধরনের সরকারের জনসমর্থন বেশিও থাকতে পারে, কমও থাকতে পারে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ক্ষমতার রাজনীতি কিছু প্রভাবশালীদের রাতারাতি অন্যায়ভাবে অর্থ-বৈভব অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া। এটা কি রাজনৈতিক কৌশলের জন্য অপরিহার্য? অথচ এর ফলে সত্যিকারের শিল্পোদ্যোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বৈষম্যের কারণে ব্যবসায় পরিবেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, রাজনীতি ও অর্থনীতি একসঙ্গে চলে না। রাজনীতিকে ধনী শ্রেণির প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এটা কীভাবে করা যায়, বিশ্বব্যাপী চিন্তা করা হচ্ছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার বলেন, ‘শুল্কছাড় দিয়ে আমরা যেসব পণ্য উৎপাদন করছি; ছাড় না দিলে সেটা কী আমদানি খরচের কমে উৎপাদন করা সম্ভব হতো? সেটা ভাবতে হবে।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক খেলার জিনিস নয়, মানুষের আমানত থাকে। মানুষের আমানত নিয়ে খেলা করা হয়। এখানে সুশাসনের অভাব রয়েছে।