আমের জন্য আশীর্বাদ হয়ে নওগাঁয় হঠাৎ করেই গতকাল রাতে বৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া দেখে শুরুতে আমচাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লেও কিছুক্ষণ পর তা থেমে যাওয়ায় স্বস্তিতে চাষিরা। এ বৃষ্টি আমের জন্য এখন আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত রোববার দিবাগত রাত ১১টার দিকে জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়। সেই সঙ্গে হয় হালকা ঝোড়ো হওয়া। তবে এটি বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না।
কৃষি বিভাগ বলছে, আমের মুকুলগুলো এখন গুটিতে পরিণত হচ্ছে। এখন গাছে পানির প্রয়োজন । হঠাৎ করেই যে বৃষ্টি হয়েছে এটি আমের জন্য খুব উপকার হয়েছে। তবে বৃষ্টিটা আরও বেশি সময় থাকলে বা ঝোড়ো হওয়া বেশিক্ষণ স্থায়ী হলে আমের ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা ছিল।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ টন । এ ছাড়া গতবারের চেয়ে জেলায় এবার ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদন অন্য যেকোনো সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।
এ বছর সাপাহারে ১০ হাজার হেক্টর, পোরশায় ১০ হাজার ৫২০ হেক্টর, পত্নীতলায় ৪ হাজার হেক্টর, নিয়ামতপুরে ১ হাজার ১৩৫ হেক্টর এবং বাকি ৭টি উপজেলায় ৩ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে আমের উৎপাদন হতে যাচ্ছে। এ জেলায় গোপালভোগ, আম্রপালি, গৌড়মতি, বাড়ি ফোরসহ বেশ কিছু নতুন জাতের আম উৎপাদন করছেন চাষিরা।
জেলার বেশ কয়েকটি আমবাগান ঘুরে দেখা গেছে, রাতে বৃষ্টি হওয়ায় সকাল থেকেই আমচাষিরা তাঁদের বাগানে গিয়ে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ বাগানের ভেতরে পানি যাতায়াতের ব্যবস্থা মজবুত করছেন। কেউবা গাছে কীটনাশক দিচ্ছেন আবার কেউ গাছের গোঁড়া বেঁধে দিচ্ছেন।
চাষিরা বলছেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে আমের মুকুল বা গুটি ঝড়ে পড়ার শঙ্কা ছিল। কিন্তু যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে এটি এই সময় আমের জন্য অনেক উপকার হয়েছে। বরং আরও খানিকটা বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল।
সাপাহার উপজেলার আমচাষি মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত খরার কারণে মুকুল থেকে আমের গুটি বড় হচ্ছিল না। হঠাৎ বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। গাছের পাতা এবং আমের গুটিতে ধুলার আস্তর পড়েছিল, এখন সব ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় গাছেই এখন আমের ছোট-বড় গুটি দেখা দিয়েছে। পানি পাওয়ায় সেগুলো আরও দ্রুত বেড়ে উঠবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, এ বৃষ্টিতে আমের ক্ষতি নয় বরং আরও উপকার হলো। কারণ বেশ কিছুদিন বৃষ্টি হয়নি, এতে অতিরিক্ত খরায় আমসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতির শঙ্কা ছিল। গতকালের বৃষ্টিটা হয়ে অনেক উপকার হয়েছে।