মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নাজমিন নাহারের। উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতেই বিয়ে দেন বাবা-মা। বেকার স্বামীর সংসারে ঠিকমতো দুবেলা খাবার জুটত না। সংসারের অভাব তাঁকে বিষিয়ে তোলে। প্রতিজ্ঞা করেন কিছু করার। এরপর শুরু করেন শিশুদের প্রাইভেট পড়ানো। এর থেকে আয় করা টাকায় কেনেন ছাগল-গাভি। এখন তিনি ছোটখাটো খামারের মালিক। খামার থেকে মাসে আয় হচ্ছে গড়ে ২৫ হাজার টাকা। এতে কেটে গেছে তাঁর সংসারের দৈন্যদশা।
তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের দোহাজারী গ্রামে ১৯৯৫ সালে মধ্যবিত্ত পরিবারে নাজমিনের জন্ম। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করার পর তাঁর বিয়ে হয় একই উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের শেরমস্ত পাতিলভাঙা গ্রামের মাইদুল ইসলামের সঙ্গে।
নাজমিন জানান, বেকার স্বামীর সংসারে এসে প্রায় অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হতো। কিন্তু এত অভাব, এত দারিদ্র্য তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাঁর কিশোরী মন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। একদিন তিনি প্রতিজ্ঞা করেন দারিদ্র্যের কাছে হার মানবেন না। এর তিনি শুরু করেন শিশুদের প্রাইভেট পড়ানো। ছয় মাস প্রাইভেট পড়ানোর ১২ হাজার টাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি ও ছাগল কেনেন। ছাগল বাচ্চা দেয়, হাঁস-মুরগি দেয় ডিম। নাজমিনের মনে স্বপ্ন জাগে।
নাজমিন আরও জানান, স্বপ্ন পূরণের জন্য হাঁস-মুরগি, ছাগল বিক্রি করে ২০১৫ সালে কেনেন সংকর জাতের দুটি বকনা বাছুর। বছর দুই পর বাছুর দুটি গাভিতে পরিণত হয় এবং প্রতিদিন ৩৬ লিটার করে দুধ দিতে শুরু করে। এই দুধ বিক্রি করে দিনে প্রায় ৬০০ টাকা আয় হয়। গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করেও কিছু টাকা পান। এভাবে ৩ বছরে আরও ৩টি সংকর জাতের গাভি কেনেন।
৫টি গাভি দিয়ে শুরু করেন ডেইরি খামার। এখন তাঁর খামারে দেশি-বিদেশি মিলে মোট ১৩টি গরু আছে। প্রতিদিন খামার থেকে গড়ে ৮৫-৯০ লিটার দুধ পান। প্রতি লিটার দুধ ৪৫ টাকা দরে বিক্রি করে খরচ বাদে দিনে এক হাজার টাকা লাভ থাকে। বছরে দুই লাখ টাকার গাভির বাছুরও বিক্রি করেন তিনি।
খামারের আয়ের টাকায় নাজমিন পাকা বাড়ি করেছেন। তিনি বলেন, ‘৭০ শতক আবাদি জমি কিনেছি। গাভির খামারও পাকা করেছি।
আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপেগাছ ও শাক-সবজি লাগিয়েছি।’