কুলাউড়ায় পাহাড়ি ও পতিত জমিতে চাষ হচ্ছে কাসাভা। লাভজনক ফসল হওয়ায় ও দাম ভালো পাওয়ায় কাসাভা চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। এক সময় এ ফসলটি কৃষকদের কাছে অচেনা ছিল। ফলে এটির আবাদ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন চাষিরা। তবে ধীরে ধীরে লাভজনক ফসল হিসেবে কাসাভার কদর বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কন্দাল ফসল চাষের আওতায় ২৫ জন কৃষক এম-৪ জাতের কাসাভার চাষ করেন। ওই বছর ৫ একর জমিতে প্রায় ৩০ টন কাসাভা চাষ হয়। অনাবাদি জমিতে কাসাভা চাষ করে ২৫ জন কৃষক প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় করেন। প্রতি কেজি কাসাভা বিক্রি হয় আট টাকা দরে।
এবার কুলাউড়ায় ৩০ জন কৃষক ৫০ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কাসাভা চাষ করেছেন। এর মধ্যে এ বছরও ২৫ জন কৃষককে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ৫ একর জমিতে কাসাভা চাষ করছেন। বাকি ৪৫ একর জমিতে নিজ উদ্যোগে কাসাভার চাষ করা হচ্ছে। একর প্রতি কাসাভা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ টন থেকে ৭ টন।
গাছ প্রতি ১৫ থেকে ১৮ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টন কাসাভার ফলন পাওয়া যায়। কাসাভাকে প্রক্রিয়াজাত করে ইস্টার পাওয়া যায়। যা দিয়ে সুজি, নুডলস, ক্রেকার্স, কেক, পাউরুটি, বিস্কুট, চিপসসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য তৈরি করা যায়। কাসাভা অবশিষ্ট অংশ দিয়ে জৈব সার উৎপাদন করা যায়। কাসাভার পুষ্টিগুণ নিয়ে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাধারণভাবে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ শর্করা, ১ থেকে ২ ভাগ প্রোটিন এবং ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ জলীয় অংশ রয়েছে। কাসাভায় আলু থেকে দ্বিগুণেরও বেশি শর্করা পাওয়া যায়। এ জন্য কাসাভা বেশি পুষ্টিকর। এর প্রধান ক্রেতা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এই গ্রুপের নিজস্ব কাসাভা প্রক্রিয়াজাত প্ল্যান্ট রয়েছে।
উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের কাসাভা চাষি মতিলাল ভর জানান, দীর্ঘদিন তাঁর এক একর জায়গা পতিত অবস্থায় ছিল। পতিত জমিতে কাসাভা চাষ করে ভালো লাভ হয়েছে। এক একর জমিতে কাসাভা চাষ করে সাড়ে ৬ টন ফলন পেয়েছেন। অর্থনৈতিকভাবে সফল হয়েছেন তিনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় কাসাভা চাষ করেছেন তিনি।
কাসাভা চাষি বিপ্রভূষন বলেন, ‘কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৩০ শতক জায়গায় কাসাভা চাষ করে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেছি। অল্প খরচে কাসাভা চাষে বেশি আয় করা সম্ভব।’
কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘কাসাভা চাষে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। উৎপাদিত কাসাভা বিক্রিতে বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে কৃষকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে আমাদের পক্ষ থেকে। পতিত জমিতে কাসাভা চাষে ফলন ও দাম ভালো এবং সহজে বিক্রি করা যায়।’