দোতলার সিঁড়ির বাঁ পাশে থাকা ওয়াশরুমটিতে এসি লাগানো। আরও কয়েকটি বড় কক্ষে এসি লাগানো আছে আগে থেকেই। কক্ষগুলোতে নতুন করে বসানো হয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইনের পাইপ। করোনা রোগী রাখার জন্য মোটামুটি প্রস্তুত রাজশাহী সদর হাসপাতাল। তবু হাসপাতালটি চালুতে বিলম্ব হচ্ছে।
এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত ১৯০২ সালে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর এটির গুরুত্ব কমে যায়। তখন এখানে স্থানান্তর করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিট। ২০০৪ সালে সদর হাসপাতালে ডেন্টাল ছাড়া অন্য সব চিকিৎসা বন্ধ হয়ে পড়ে। তার পর থেকে নিচতলায় ডেন্টাল ইউনিটের বহির্বিভাগ। আর দোতলাটি ব্যবহার হয়ে আসছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হোস্টেল হিসেবে।
করোনার প্রকোপের শুরুতে হাসপাতালটি আবার চালুর বিষয় আলোচনায় আসে। গত বছরের জুনে করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণ দেখা দিলে রামেক হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যায়। একের পর এক সাধারণ ওয়ার্ড ছেড়ে দেওয়ার পরও রোগী রাখার জায়গা হচ্ছিল না। ওদিকে বিঘ্নিত হচ্ছিল অন্য রোগীদের চিকিৎসার। তাই সদর হাসপাতালটিই চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়।
তারপর হোস্টেলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে সংস্কারকাজ শুরু করে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২। ইতিমধ্যে কাজও প্রায় শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো হাসপাতালটি চালু হয়নি। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ কমে এলেও এখন আবার বাড়ছে। রোগীও বাড়ছে রামেক হাসপাতালে। রোগী যখন কমেছিল, তখন এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডগুলোকেও আবার সাধারণ ওয়ার্ড করা হয়। ফলে এখন আবার রোগী নিয়ে সমস্যায় পড়ছে হাসপাতালটি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘করোনা হাসপাতাল করার জন্য আমরা দোতলা থেকে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নিয়েছি। হাসপাতাল চালুর জন্য কাজও মোটামুটি শেষ। তবে এখনো চালু হয়নি। দোতলায় করোনা ইউনিট হলেও নিচতলায় ডেন্টাল ইউনিটের বহির্বিভাগ থাকবে।’
গতকাল শনিবার সকালে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় ডেন্টাল ইউনিটের বহির্বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। দোতলাটি সুনসান নীরব। ১৮-২০টি বড় ঘরের সবগুলোরই দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, অক্সিজেন লাইনের জন্য পাইপও বসানো হয়েছে।
রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শুধু সংস্কারকাজের জন্য প্রায় আড়াই কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। আর অক্সিজেন সরবরাহ লাইন করতে খরচ হয়েছে আরও প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। তিনি বলেন, ‘কাজ মোটামুটি শেষ। আগামী মাসে আমরা এটা বুঝিয়ে দিতে পারব।’
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, সদর হাসপাতালের দোতলায় অন্তত ২৫০টি শয্যা রাখা সম্ভব। তবে করোনা রোগীদের শয্যাগুলো একটু দূরত্ব রেখেই বসানো হবে। তাই শয্যা ধরা হচ্ছে ১৫০টি। এর মধ্যে বড় একটি হলরুমে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) করে ১৫টি শয্যা রাখা হবে। তিনি বলেন, ‘করোনা কিন্তু এখন আবার বাড়ছে। দ্রুত হাসপাতালটি চালু করা দরকার। যত দেরি করব, তত বেশি সমস্যায় পড়তে হবে।’
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন। জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, একটা হাসপাতাল চালু করতে হলে সেখানকার জনবল, শয্যা, চিকিৎসাসামগ্রীসহ নানা বিষয় সংস্থানের বিষয় থাকে। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালটি চালুর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন তিনি।