আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশ দখল করে শাক-সবজিসহ ফলমূল নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও ওই সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে কিনছেন পণ্য। এতে যানবাহন চলতে না পারায় সড়কে তৈরি হচ্ছে তীব্র জট। অন্যদিকে বাড়ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা। গতকাল সোমবার বিকেলে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশ দখল করে বসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। মহাসড়কের পাশে এভাবে দোকানপাট বসানোর কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে দুপাশে। এতে অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা।
বাজার করতে আসা স্থানীয় অধিবাসী অ্যাডভোকেট এ এস এম সারোয়ার জাহান বলেন, ‘একদিকে সড়কে অধিক পরিমাণে বেড়েছে তিন চাকার যানের সংখ্যা, অন্যদিকে সাপ্তাহিক হাটের দিন দোকানপাট বসানো হয়। এ কারণে নির্বিঘ্নে পায়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে যায়। এভাবে বাজার বসানোয় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’ এর স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার সাপ্তাহিক হাট বসে ওই স্থানে। এ দুদিনে অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়ে যায়। হাটের দিনে যানবাহন তো দূরের কথা, পথচারীদের হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। এ ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও প্রায় নাজুক হয়ে পড়ে সড়কের পরিস্থিতি।
ষাটোর্ধ্ব মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার নিজের কিছু ওষুধ ও টুকটাক তরিতরকারি কিনতে বাজারে আইছি। পত্তি (প্রতি) বাজারের দিন গাড়িঘোড়ার (যানবাহন) এমন জাম (যানজট) লাগে। এর লাইগ্যা বাজারে আইতাম মনডা চায় না।’
পথচারী মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আঞ্চলিক এই মহাসড়কের ওপর দোকানপাট বসার কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। এ কারণে আমাদের মতো পথচারীদের চলাচল করা কষ্ট হয়ে পড়ে। তবুও কি আর করা। প্রয়োজনের তাগিদে চলাচল তো করতে হবে।’
অটোরিকশাচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যানজট তো আর আমরা ইচ্ছে করে করি না। সাধারণ গৃহস্থসহ তরিতরকারির দোকানপাট নিয়ে মহাসড়কের ওপর বসার কারণে সড়ক সরু হয়ে যায়। এতে এমন যানজট তৈরি হয়। সড়কের দুপাশের ওপর থেকে এসব দোকানপাট সরিয়ে দিলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’
সবজি বিক্রেতা মো. তোতা মিয়া, আব্দুস সালাম, হারিছ মিয়াসহ আরও কয়েকজন জানান, মহাসড়কের ওপর বসে দোকানদারি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও কি আর করা। জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে সড়কের পাশে বসতে হয়।
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক দুলাল ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের নির্দিষ্ট কাঁচাবাজার থাকা সত্ত্বেও লোকজন কে বা কাদের নির্দেশনায় মহাসড়কের ওপর তরিতরকারির দোকানপাট নিয়ে বসে, আমার ঠিক জানা নাই। তবে উপজেলা প্রশাসন যদি মহাসড়কের দুপাশ থেকে এসব দোকানপাট উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়, তাহলে তাঁদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’
ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘দোকানপাট বসার কারণে মহাসড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। এ কারণে পথচারীদের চলাচলে কষ্ট হয়। অন্যদিকে যারা দোকান নিয়ে বসে, যেকোনো সময় ছোট-বড় গাড়ি তাঁদের ওপর তুলে দেওয়ার শঙ্কা কাজকরে। বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে একাধিকবার বলেছি। তবুও বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন।’
জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘মহাসড়কের ওপর দোকানপাট বসানোর কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত স্থায়ী সমাধান করা হবে।’