এক সময় বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা, কালুপাড়া, মোল্লাপাড়া, ঐচারমাঠ, সাহেবেরহাট, ছয়গ্রাম, বাটরা, বাহাদুরপুর, বাকালসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার পরিবারের নারী-পুরুষ বাঁশ-বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্রের কদরও ছিল ভালো। ফলে এ শিল্প থেকে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। কালের আবর্তে, প্রযুক্তির উৎকর্ষে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেকটাই হুমকির মুখে এখন শিল্পটি।
বাঁশের সংকট ও অভাবের তাড়নায় এই শিল্পের কারিগররা দীর্ঘদিনের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন। তবে এর মাঝেও হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার আজও পৈতৃক এই পেশাটি ধরে রেখেছেন। বাঁশ-বেত শিল্পের কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অতীতে বাঁশ ও বেত দিয়ে ঘর, কুলা, চালুন, খাঁচা, মাচা, মই, চাটাই, ওড়া, ঝুড়ি, ডুলা, মোড়া, মাছ ধরার চাঁই, সোফাসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী এবং আসবাব তৈরি হতো।
কালুপাড়া গ্রামের কালা বৈদ্য জানান, বিভিন্ন ধাতব ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক ব্যবহার, প্রয়োজনীয় বাঁশ ও বেত না পাওয়া এবং পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষ এ পেশাটি ছেড়ে দিয়েছেন।
কারিগর সান্টু রায় বলেন, ‘আগে বড় ও মাঝারি আকারের একটি বাঁশ ৫০-১০০ টাকায় কেনা যেত। এখন ২০০-৩৫০ টাকায় কিনতে হয়। প্রায় দুদিনের পরিশ্রমে একটি বড় বাঁশ দিয়ে ১০টি খাঁচা তৈরি করা যায়। আর প্রতিটি ৫০ টাকা করে ১০টি খাঁচা ৫০০ টাকা বিক্রি হয়। এতে আমাদের পোষায় না।’
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা দিনা খান জানান, যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাঁশ-বেত শিল্পে কাজ করতে পুঁজির প্রয়োজন হয়, তাহলে সহযোগিতা চাইলে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এবং ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখা আমাদের দায়িত্ব। উপজেলায় বাঁশ-বেত শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা যদি উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চান, তাহলে বিআরডিবি, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হবে।’