সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
‘হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের পর আমার স্ত্রীকে ভর্তি করাতে চিকিৎসককে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু শয্যাসংকটের কারণে চিকিৎসক তাঁকে ভর্তি না করে ওষুধ লিখে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। চিকিৎসক যদি বাড়িতে না পাঠিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রাখতেন, তাহলে হয়তো টুম্পা বেঁচেও যেত।’
ডেঙ্গুতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হারিয়ে এই হাহাকার রঞ্জিত কুমার নাথের। তিনি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার দক্ষিণ শীতলপুর এলাকার বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রী টুম্পা রানী নাথ (৩২) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গতকাল শুক্রবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে মারা গেছেন। তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
রঞ্জিত জানান, গত রোববার রাতে হঠাৎ তীব্র ব্যথা ও জ্বরে আক্রান্ত হন তাঁর স্ত্রী। পরদিন সোমবার সকালে জ্বর বেড়ে গেলে তাঁকে সীতাকুণ্ডের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে রক্ত পরীক্ষার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। তবে হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, তাঁর স্ত্রীর রক্তের প্লাটিলেট ঠিক আছে। হাসপাতালে ভর্তি না করে ওষুধ দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ জানান, তাঁদের হাসপাতালে বর্তমানে শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। গত তিন দিনে হাসপাতালে ৩৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১২ জন।
দক্ষিণ শীতলপুর এলাকার বাসিন্দা নিতাই কুমার নাথ জানান, গত ২৭ জুন তাঁর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। তাকে নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে টানা সাত দিন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে সে বাড়িতে ফেরে। মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসার পাঁচ দিনের মাথায় তাঁর স্ত্রীও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। তাঁকে আর বাঁচানো যায়নি। আক্রান্ত হওয়ার ছয় দিনের মাথায় মারা যান তিনি।