সম্পাদকীয়
সুচিত্রা সেন অভিনয় ছেড়েছিলেন ১৯৭৮ সালে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন ‘প্রণয় পাশা’ ছবিতে। এরপর স্বেচ্ছায় ছবিপাড়ার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখেননি। অনেক পরিচালক ছবির অফার নিয়ে তাঁর কাছে গেছেন, কিন্তু রমা দাশগুপ্ত তথা সুচিত্রা আর সে জগতে ফিরে যাননি।
এ সময় তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় যুক্ত হন। তাঁকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয় ২০০৫ সালে। কিন্তু তত দিনে তিনি বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ভারতীয় রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সশরীরে এই খেতাব নেওয়াটাই রীতি। সুচিত্রা সেন পুরস্কার নেওয়ার জন্য দিল্লি যেতে আপত্তি জানান। তাই তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়নি।
এর আগের একটি ঘটনার কথা বলি। এ কথা অনেকেই জানেন না, সুচিত্রা সেন পদ্মশ্রী খেতাব পেয়েছিলেন ১৯৭২ সালে। সম্মাননাটি তিনি গ্রহণ করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা নিয়ে তাঁর কোনো অহংকার ছিল না। তিনি নিজের নামের আগে কখনোই পদ্মশ্রী লেখেননি, লেটারহেডে পদ্মশ্রীকে জায়গা দেননি।
তিনি যে পদ্মশ্রী পেতে যাচ্ছেন, সে কথা রাজভবন থেকে তাঁকে জানানো হয়েছিল। পদ্মশ্রী পাওয়ার সংবাদে অনেক সাংবাদিক চেষ্টা করেছেন তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে। কাউকেই তিনি সাক্ষাৎকার দেননি।
সে পদ্মশ্রী খেতাবটি দৃশ্যমান কোনো জায়গায় রাখেননি। বাঁধিয়েও রাখেননি। তাঁর বাড়ির দেয়ালে ছিল যামিনী রায়ের ছবি। কন্যা মুনমুনের আঁকা ছবিও ছিল। কিন্তু পদ্মশ্রীটা ছিল না। আরও একটা ব্যাপার। সুচিত্রা সেনের নিজের ছবিও ছিল না সে ঘরে।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক ও সুচিত্রা সেনের ঘনিষ্ঠজন গোপালকৃষ্ণ রায় অনুযোগ করে বলেছিলেন, ‘তুমি সাক্ষাৎকার দাও না বলেই তোমাকে নিয়ে এত গুজব।’
এ কথা শুনে সুচিত্রা সেন বলেছিলেন. ‘ক্ষতি কী? আমি তো ন্যাশনাল প্রোপার্টি। মানে জাতীয় সম্পদ। যার যেমন খুশি আমাকে নিয়ে ভাবতে পারে—লিখতেও পারে।’
সূত্র: গোপালকৃষ্ণ রায়, সুচিত্রার কথা, পৃষ্ঠা ১১৯