এ বছর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুর অঞ্চলের তিস্তা অববাহিকায় সপ্তমবারের মতো বন্যা হয়েছে। হঠাৎ বন্যা ও নদীভাঙনের ভয়াবহতায় এই অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা নদী খনন, বাঁধ নির্মাণসহ সরকারের প্রতিশ্রুত ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন করা দরকার।
তিস্তা চুক্তি ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গতকাল সোমবার রংপুরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ কথা বলেন বক্তারা। দুপুরে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শুকনো মৌসুমে খরায় গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখে ভারত, আবার পানি একটু বাড়লেই বাংলাদেশকে কিছু না জানিয়ে বাঁধ খুলে দেয়। এতে প্রতিবছর ব্যাপক ফসলি জমিসহ হাজার হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। রাতারাতি বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার।
তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশের ১১৫ কিলোমিটারে বসবাসরত ২ কোটি মানুষের জীবনে মহাদুর্যোগ নেমে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।
সংগঠকদের অভিযোগ, ২৩৫ বছর বয়সী নদী তিস্তার জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি কোনো পরিচর্যাই করা হয়নি। তিস্তার নাব্যতা নেই। নেই সামান্য গভীরতা। নদীশাসন ও বন্যা রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি করেছিল। তিস্তার ডান তীরে নড়বড়ে ওই বাঁধ থাকলেও তিস্তা ও এর তীর সম্পূর্ণ অরক্ষিতই রয়ে গেছে।
মানববন্ধনে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী সভাপতিত্ব করেন। এ সময় বক্তব্য দেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু, তুহিন ওয়াদুদ, সাদেকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আলী, বখতিয়ার হোসেন শিশির, কেন্দ্রীয় নেতা সাজু সরকার, মোস্তাফিজার রহমান, আশিকুর রহমান, বাবুল আকতার প্রমুখ।
সংহতি জানিয়ে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলার চোখসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও বক্তব্য দেন। রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার সহস্রাধিক নদীভাঙনকবলিত তিস্তাপারের মানুষসহ সাধারণ লোকজন এতে অংশ নেন।