উত্তম বড়ুয়ার আর খোঁজ মেলেনি। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে মায়ের সঙ্গে সর্বশেষ ফোনে কথা বলেছিলেন তিনি। এরপর আর বাড়ি ফিরে আসেননি। কেউ জানেন না, উত্তম বড়ুয়া কোথায় আছেন। এভাবে কেটে গেছে ৯টি বছর।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুতে ঘটেছিল ইতিহাসের জঘন্যতম সাম্প্রদায়িক হামলা। এদিন ১২টি বৌদ্ধমন্দির ও ২৬টি বসতবাড়িতে আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া, টেকনাফ ও পটিয়ার বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দিরে একই ধরনের হামলা হয়।
উত্তম বড়ুয়া ছিলেন রামুর ফঁতেখারকুল ইউনিয়নের হাইটুপি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি পবিত্র কোরআনের অবমাননা করেছেন। কেউ সে অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই বৌদ্ধমন্দিরগুলোতে হামলা চালায়। পরে জানা যায়, উত্তম বড়ুয়া নিজে কোনো ছবি পোস্ট করেননি। বরং সেই ছবি তাঁর ফেসবুক আইডিতে ট্যাগ করা হয়েছিল। আর সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন রামু ফকিরাবাজারের ফারুক কম্পিউটার ও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ফারুক আহমেদ ও তাঁর বন্ধু আব্দুল মুক্তাদির। এঁরা সবাই সেই মামলায় আসামি হয়েছেন।
হারানো সন্তানের অপেক্ষায় আজও পথ চেয়ে বসে আছেন উত্তম বড়ুয়ার মা মাধু বড়ুয়া। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন উত্তম বড়ুয়া। প্রায় ৯ বছর খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটছে পরিবারটির।
হাইটুপি গ্রামের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা বলেন, কেউ বলেন উত্তম বড়ুয়া ঘটনার পর ভারতে পালিয়ে গেছেন। আবার কেউ বলেন তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। উত্তর বড়ুয়া বাড়িতে তাঁর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক বোন আছেন, তাঁকে নিয়ে আশায় বুক বাঁধেন মা মাধু বড়ুয়া। তিনি প্রতিক্ষায় থাকেন উত্তম একদিন ফিরে আসবে।
এদিকে সেদিনের সেই হামলার ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়েছিল। এতে এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জনসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরপর আপোসের ভিত্তিতে একটি মামলা প্রত্যাহার করা হলেও বাকি সবক’টির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ১৮টি মামলায় ৯৯৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে আটকে গেছে সেই মামলার বিচারকাজ। এই মামলার সব আসামি এতদিন জামিনে বেরিয়ে গেছেন।