আজকের এই সন্ধ্যায় ঠিক কী বলা উচিত, সেই ভাবনা শুরু করতেই মনে হলো, সুইডিশ একাডেমি যে বিরাট সম্মান আমাকে অর্পণ করলেন, সে জন্য আমার কৃতজ্ঞতাটুকুই জানাব শুধু। তবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার কাজটিও সঠিকভাবে সম্পন্ন করাটা খুব সহজ তো নয়। আমার কাজ শব্দ নিয়ে ঠিকই, কিন্তু সেই শব্দরাও আমার আজ্ঞাবহ নয়। যদি এটাই বলি, যেকোনো লেখকের কাছে এই সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক সম্মানপ্রাপ্তি দুর্লভ এবং সে ব্যাপারে আমি সচেতন—তাহলে এমন কী অজানা কথাই বা বললাম।
আবার নিজের অযোগ্যতা নিয়ে বেশি বলতে গেলে, একাডেমির সম্মিলিত প্রজ্ঞা এবং এবারের সাহিত্য সম্মানের বিচারককেও খাটো করা হয়। আবার একাডেমির এই বাছাইয়ের বেশি প্রশংসা করলেও মনে হবে যে আমার এই সম্মানপ্রাপ্তিকে নিয়ে আমি ঢাক পেটাচ্ছি। ফলে এটাই স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেওয়া ভালো যে এই সম্মানপ্রাপ্তির খবরে সমস্ত আনন্দ, গর্ব, অহংকার মেশানো আবেগ আমাকে গ্রাস করেছিল, স্বাভাবিকভাবেই, যা একজন সাধারণ মানুষের হওয়ার কথা এমন মুহূর্তে। সেই সঙ্গে রাতারাতি পাবলিক ফিগার হয়ে যাওয়ার বিড়ম্বনাও যে চেপে ধরেনি তা নয়! নোবেল পুরস্কার কি অন্য যেকোনো সম্মানের মতোই, না তার থেকে অনেকটাই উচ্চ মাপের? আমি নিজেই ধন্যবাদ জ্ঞাপনের শব্দ খুঁজছি, কিন্তু যেহেতু এটা অন্য সবকিছুর তুলনায় আলাদা, ভাব প্রকাশের জন্য হাতড়াতে হচ্ছে। ভাষা তো সব অনুভূতির ভার বহন করতে পারে না।
সে জন্যই আজ নিজেকে পরোক্ষভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করছি, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের তাৎপর্যকে
নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করতে। এটি যদি শুধু সাহিত্যের গুণগত স্বীকৃতি হতো অথবা লেখকের আন্তর্জাতিক খ্যাতির বিচারে ধার্য হতো, তাহলে বলতে পারতাম যে অন্য কারও থেকে বেশি যোগ্য প্রতিপন্ন হওয়ার মতো কোনো কারণ
ছিল না আমার।
• টি এস এলিয়ট ১৯৪৮ সালে নোবেল পুরস্কার পান।