সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের দক্ষিণে সরকারি আবাসন প্রকল্পের (গুচ্ছগ্রাম) বসতভিটাসহ অর্ধশতাধিক বাড়িঘর যমুনার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত জালালপুর, পাকুরতলা, আরকান্দি, ঘাটাবাড়ী ও পাচিল এলাকায় মুহূর্তেই এসব বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে গুচ্ছগ্রামের বহু ঘরসহ এলাকার অর্ধশত বাড়িঘর, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কসহ চার গ্রামের কয়েক শ বাড়িঘর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এনায়েতপুর থেকে পাঁচিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা রক্ষায় সরকার সাড়ে ৬শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও পাউবো কর্মকর্তাদের তদারকির অভাব রয়েছে। এজন্য ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বিস্তীর্ণ এলাকা রক্ষায় জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তাঁরা। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে যেকোনো সময় গুচ্ছগ্রামের পুরোটাই নদীগর্ভে চলে যাবে।
জালালপুর গ্রামের খোরশেদ মাস্টার বলেন, ‘আমার বাড়িঘর, ফসলি জমি যা ছিল সব নদীতে চলে গেছে। গতকাল সকালে নদীভাঙনে এই এলাকার অর্ধশতাধিক বাড়িঘরসহ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে বাড়িঘর নদীতে চলে যাচ্ছে অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙন ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নেই।’
জালালপুর গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কথা রয়েছে। গত বছর শুষ্ক মৌসুমে ঠিকাদার কাজ শুরু করেন। কিছু বালুর বস্তা ফেলা ছাড়া তাঁরা কিছুই করেননি। প্রতিদিনই যমুনার ভাঙনে বাড়িঘর, ফসলি জমি নদী গিলে খাচ্ছে। তারপরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে দেখা যায়নি।
আব্দুস সালাম আরও বলেন, ‘আমার বাড়িও ভাঙনের মুখে রয়েছে। বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা চিন্তা করছি।’
পাকুরতলা গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, জালালপুরে সরকারি গুচ্ছগ্রাম প্রতিদিনই ভাঙছে। গ্রামের অধিকাংশ যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। বাড়িঘর হারিয়ে গুচ্ছগ্রামের অনেকে অন্যত্র চলে গেছেন। যাঁদের যাওয়ার জায়গা নেই তাঁরা খোলা আকাশের নিচে অথবা অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে কোনোমতে বাস করছেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার বলেন, ‘নদীভাঙন সবসময় ঠেকানো যায় না। তারপরও পানি উন্নয়ন বোর্ডে ভাঙন ঠেকাতে কাজ করছে, আর আমরা ইচ্ছে করলেই বস্তা ফেলতে পারি না। টেন্ডারের বস্তা টাস্কফোর্স গুনে না দিলে ফেলা যায় না। ভাঙন ঠেকাতে ডাম্পিং কাজ চলছে। বন্যার মৌসুম শেষ হলে স্থায়ী কাজ শুরু হবে।’