দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রংপুরে আলোচনায় এখন শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান। ভোটাররা বলছেন, এই অঞ্চলের শিল্প বিকাশে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে যাঁরা কাজ করবেন, এমন প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে চান তাঁরা। নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীরাও ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাঁরা নির্বাচিত হওয়ার পর উন্নয়ন, শিল্পে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করবেন।
রংপুরের ছয়টি আসনের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভোটারদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, দেশের কৃষি শিল্পের কাঁচামালের বড় জোগান দেয় রংপুর অঞ্চল। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও এখানে গড়ে ওঠেনি ভারী শিল্প। এই অঞ্চল আটকে আছে চালকল, পাটশিল্প, আলুর হিমাগারসহ কিছু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে। সম্প্রতি গ্যাস এসেছে। সেই সঙ্গে রংপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত হয়েছে ছয় লেন সড়ক। এখন স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। তেমন পরিবেশ তৈরি করতে পারলেই কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। কিন্তু এখানে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা দীর্ঘদিনেও সেই উদ্যোগ নেননি। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, বেকার সমস্যা থেকে যাচ্ছে। নির্বাচনের মাঠে ভোটের ক্ষেত্রে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন ভোটাররা।
রংপুর-৪ (কাউনিয়া ও পীরগাছা) আসনের ভোটার তাম্বুলপুর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় কলকারখানা নাই। কৃষিজমিতে সারা বছর কাজ থাকে না। হামরা এবার ৫-১০ সের ত্রাণের চালের জন্য ভোট দিবার নই। যে এলাকাত কলকারখানা বানাইবে, হামার কাজের ব্যবস্থা করি দিবে, তাঁকে ভোট দিমো।’
ভোটের ভাবনা জানতে চাইলে কাউনিয়া সদরের গৃহবধূ ইশরাত জাহান বলেন, ‘ঘর-গৃহস্থের কাজ শেষে অলস সময় পার করতে হয়। এলাকায় শিল্প কলকারখানা হলে অলস সময়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে পরিবারে সহায়তা করতাম। ভোট এবার তাঁকেই দিব, যে নারীদের কাজের ব্যবস্থা করবেন।’
এই আসনের নৌকার প্রার্থী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নির্বাচনী পথসভায় দাবি করেছেন, রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আগামী পাঁচ বছর হবে শিল্পায়নের বছর, মানুষের কর্মসংস্থানের বছর, চাকরি পাওয়ার বছর।
রংপুর-৩ আসনের ভোটার মমিনপুর এলাকার বাসিন্দা খুরশিদ আলম বলেন, ‘রংপুর একটি বিভাগীয় শহর। কিন্তু এখানে কোনো কলকারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান নেই। বছরের পর বছর আমাদের ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতে হয়। সেখানে আয়ের বড় একটা অংশ থাকা-খাওয়াতে চলে যায়। এলাকায় যদি এমন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকত তাহলে ঢাকায় যেতে হতো না। অনেক উন্নতি হতো। প্রার্থীরা এবার শিল্প কলকারখানা স্থাপন করে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আমরা এবার ভেবেচিন্তে ভোট দেব।’
হরিদেবপুরের বাসিন্দা ফেন্সি বেগমের পরিবারে তিনজন নারী ভোটার। তিনি বলেন, ‘ভোট আসলে নারীদের দাম বাড়ে। কিন্তু অন্য সময় আমাদের নিয়ে কেউ ভাবে না। রংপুরে নারীদের কাজের সুযোগ তেমন নেই। দুই মেয়ে পড়ালেখা করে বসে আছে, কাজ নেই। তাই যে এবার কাজের ব্যবস্থা করে দেবে তাঁকেই আমরা ভোট দেব।’
এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জি এম কাদের বলেছেন, রংপুরে বড় সমস্যা হলো বেকার সমস্যা। এটি দূর করার জন্য শিল্পায়নের প্রয়োজন। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য তিনি শিল্পায়নের চেষ্টা করবেন বলে জানান।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত রংপুর-১ আসনে ৯ জন, রংপুর-২ আসনে ৩, রংপুর-৩ আসনে ৬, রংপুর-৪ আসনে ৩, রংপুর-৫ আসনে ৮ ও রংপুর-৬ আসনে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জেলায় মোট ভোটার ২৪ লাখ ৩২ হাজার ৫০৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১২ লাখ ২০ হাজার ৩৯৪ এবং পুরুষ ১২ লাখ ১২ হাজার ৮৭ জন। এ ছাড়া ২৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। জেলার মোট ৮৫৮টি ভোটকেন্দ্রে রোববার ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।