ভ্যানচালক স্বামী দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর চন্দবাড়ির তানিয়া বেগম চোখে অন্ধকার দেখেন। দুই সন্তান নিয়ে অনটনে দুঃসহ সময় কাটছিল তাঁর। এক বছর আগে তিনিও এ কারখানায় কাজ নেন। বেতন পাচ্ছেন ৮ হাজার টাকা। এখন আর সংসার চালাতে তাঁকে হিমশিম খেতে হয় না।
এখানে কর্মরত এক নারী নাসিমা বেগম। বাড়ি ধোপাকান্দি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামে। মাসিক বেতন পান ১০ হাজার। এ টাকায় তিনি সংসার চলানোর পর কিছু সঞ্চয়ও করেন। অপর দিকে চন্দবাড়ি গ্রামের কলেজপড়ুয়া দুই বোন হামিদা ও রেহনা এখানে কাজ করে পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছেন। অনেকেই সংসার সামলানোর পর পাড়ার এ কারখানায় কাজ করে রোজগার করছেন।
করোনাকালে অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় অনেক নারী শ্রমিক বাড়ি ফিরে এসেছেন। কাজ হারিয়ে বেশির ভাগের দিন কাটছিল অনাহারে-অর্ধাহারে। এসব শ্রমিকের সুঁই-সুতার কাজে দক্ষতা ছিল। তাঁদের এই দক্ষতাকে কাজে লাগান আলীফ-মীম ফ্যাশন কারখানার মালিক বরকত আলী।
কারখানার ব্যবস্থাপক মুন্নী বেগম বলেন, করোনার কারণে অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু নারী কাজ হারান। হেয়ার ক্যাপ নির্মাণের সঙ্গে সুঁই-সুতার সম্পর্ক থাকায় গার্মেন্টস থেকে ফেরত আসা মহিলাদের প্রাথমিকভাবে বাছাই করে কাজ দেওয়া হয়। ওরা ভালো কাজ পারছে। এ কারখানা এখন ওদের নতুন ঠিকানা।
উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে আলীফ-মীম ফ্যাশনের কারখানা। এ কারখানা এখন হতদরিদ্র নারীদের আয়-রোজগারের স্থায়ী ঠিকানা। বর্তমানে ১৬টি কারখানায় ১ হাজার ২৩ জন মহিলা কাজ করছেন।
কারখানার মালিক বরকত আলী জানান, এসএসসি পাসের পরই বিয়ে করেন তিনি। বেকারত্ব ঘোচাতে স্ত্রী মুন্নী বেগমকে নিয়ে ঢাকার উত্তরায় একটি চীনা হেয়ারক্যাপ কারখানায় চাকরি নেন। টানা ১০ বছর সেখানে চাকরি করেন। দক্ষতার পাশাপাশি সেখানেই দুই চীনা ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। এর মধ্যে চীনা ভাষাও শিখে ফেলেন।
একপর্যায়ে ওই দুই ব্যবসায়ী তাঁকে হেয়ারক্যাপ ফ্যাশন কারখানা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। স্বল্প পুঁজিতে ঢাকার আশপাশে কারখানা স্থাপন সম্ভব নয়। তাই তিনি নিজ গ্রাম বিষ্ণুপুর বেছে নেন। দুই বছর আগে নিজ বাড়িতে একটি হেয়ারক্যাপ ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তোলেন। স্বামী-স্ত্রী দুজন ছিলেন প্রশিক্ষক। সহস্রাধিক বিত্তহীন নারীকে বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপর তাঁদের কারখানায় চাকরি দেওয়া হয়।
কারখানার সুপারভাইজার লাকী বেগম বলেন, যারা সূচিকর্মে পারদর্শী, তাঁদের জন্য এ কাজ একদম সহজ। ইউরোপ ও আমেরিকার মার্কেটে হেয়ারক্যাপের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। চীনা ব্যবসায়ীরা সেখানে হেয়ারক্যাপ রপ্তানি করেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ ছোট মনির বলেন, পরচুলভিত্তিক এসব ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের প্রসার ঘটলে এলাকায় ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে।