‘আমাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দেবে বলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদের নাম দিয়ে ১৫ লাখ টাকার চেক নিয়েছেন।’ সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে ফেসবুকে এ অভিযোগ করেছেন উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল উদ্দীন। তাঁর অভিযোগ, টাকা নিয়ে মনোনয়ন তো দূরে থাক, তাঁর নামটি পর্যন্ত কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহ-আইন-বিষয়ক সম্পাদক কামাল উদ্দীন। স্ট্যাটাসে তিনি সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবিরকে অভিযুক্ত করেন। তবে স্ট্যাটাসে সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা মোসলেম উদ্দিন আহমেদকে জড়ানোর অভিযোগে তাঁকে (কামাল) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
এবার সারা দেশে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেলে জয় নিশ্চিত, এমন একটা মনোভাব রয়েছে প্রার্থীদের মধ্যে। আর সে কারণেই কোথাও কোথাও টাকা আর্থিক লেনদেন কথা শোনো গেছে।
কামাল উদ্দীন পেশায় আইনজীবী। তিনি চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী ও অতিরিক্ত পিপি। তিনি তাঁর স্ট্যাটাসে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ঘুষ হিসেবে যে চেক দিয়েছেন তার ছবিও তুলে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এখন আমি আমার চেক ও টাকা ফেরত চাই। অন্যথায় ফৌজদারি মামলা করতে বাধ্য হব।’
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় কামাল উদ্দীনের চেকটির সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। আবার গতকাল বিকেল থেকে তাঁর স্ট্যাটাস আর দেখা যাচ্ছে না।
কামালের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘কামালকে আমি চিনি, তবে তেমন একটা পরিচয় নেই। হয়তো কেউ মনোনয়ন বাণিজ্য করছেন। তাঁরা হয়তো কামালকে ব্যবহার করে সেটির (মনোনয়ন বাণিজ্য) দায় আমাদের ওপর তুলে দিয়েছেন।’ সাংসদ মোসলেম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যাঁর বিরুদ্ধে (হুসেইন কবির) অভিযোগ উঠেছে, তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি অস্বীকার করেছেন। তবে অভিযোগকারীর সঙ্গে এখনো কথা বলতে পারিনি। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা না বললে বোঝা যাবে না কার অভিযোগ সঠিক।
নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠছে তাঁরা সমাজের সম্মানিত মানুষ। এমন মানুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই তদন্ত না করে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। তবে যেসব অভিযোগ পাচ্ছি, সেগুলো আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’